গণমাধ্যমে কথা বলায় নির্যাতনে শিকার ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার না পেলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব অভিযোগ জানিয়ে তিনি আত্মহত্যার হুমকি দেন।
তিনি বলেন, সভাপতি ও সম্পাদকের ন্যায়-অন্যায়গুলো আমরা যারা ধরিয়ে দেই তারাই শত্রু হয়ে গেছি। কারণে অকারণে আমাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি এই ঘটনার বিচার না হলে আমি সুইসাইড করব। এসময় তিনি নিজের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ন দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কী কারণে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল সমস্যা হচ্ছে হলের পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) রুমগুলো। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একচ্ছত্রভাবে হলের সিট বাণিজ্য করতে চান। যারা এর প্রতিবাদ করেছে তারাই তাদের শত্রু হয়ে গেছে।
জান্নাতুল ফেরদৌসীর অভিযোগ, তিনি হলের বাইরে থাকা অবস্থায় হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তার রুমে ঝামেলা করেন। পরে তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে এলে তাকে মারধর করা হয়।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি হলের বাইরে ছিলাম। রাজিয়ার মেয়েরা আমার রুমে ঝামেলা করে। পরে আমার রুমের মেয়েরা আমাকে ফোন দেয়। আমি হলে এসে কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে কথা বলি। হলে আসা মাত্র আমাকে কয়েকজন মারধর করে। আমার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকে ঘটনাস্থলে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে বঙ্গমাতা হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুন নাহার বলেন, আমরা মূল ঘটনা এখনো জানি না। আমরা শুনেছি এটা ছাত্রলীগের ইন্টারনাল বিষয়। দুই পক্ষই ছাত্রলীগের। আমরা এখানে এসেছি। যা শুনছি সব আপনাদের কাছ থেকে শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরে ক্যাম্পাসের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে রাত তিনটার দিকে ক্যাম্পাসে আসেন ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য। এসময় তিনি বিচারের দাবিতে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়া উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সকালে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার জন্য বলেন। তবে রাতেই অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ছাত্রলীগের একাংশসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্য ও নানা অসঙ্গতি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুন ফেরদৌসী। এ ঘটনার পর শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় হলের কক্ষে গিয়ে তাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানা, আয়েশা ইসলাম মিম, কামরুন নাহার জ্যোতী, শিরিন আকতার, রিতু, স্বর্ণা, নুরজাহান, ফেরদৌসী, লিমা, পপি, বিজলীসহ আরও কয়েকজন। এসময় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার সামনে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।