জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট বাংলাদেশ সফর করে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তা নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, তারা এত মিথ্যাচার করে যে, মিথ্যাচারের জন্য তাদের বিশেষ নোবেল দেয়া দরকার।
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
বেলা ১২টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়। শতাধিক বিএনপি’র নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা এতে অংশ নেন। ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারের যিনি প্রধান তিনি কিছুদিন আগে এসেছিলেন। সরকারের মন্ত্রীদের তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুমের ঘটনা ঘটছে। এসবের নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হওয়ার জন্য স্বাধীন কমিশন দরকার।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর যারা জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশনে কাজ করে এই কর্মকর্তাদের কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জড়িত আছে কিনা, তা দেখা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
তিনি আরো বলেন, এই ইঙ্গিতগুলো, কথাগুলো সাধারণ কথা না। সরকার ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারকে তিন দিনের ভিসা নিয়ে জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনে পাঠাচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার পরিষ্কারভাবে তার প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আর আমাদের সরকার প্রচার করছে তিনি বলেছেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কিছু বলেননি। এটা জনগণের সাথে প্রতারণা।
তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের অধীনে অবিলম্বে স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। অন্যথায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুমের জন্য অতীতে যেভাবে সরকার প্রধানদের বিচার হয়েছে, সেভাবে বিচারের আওতায় আনা হবে।
বিএনপি’র আন্দোলনে সরকার ভয় পেয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন দেখে সরকার ভয় পেয়ে গেছে, তাই আবার লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীন দেশে গুম হওয়া পরিবারের আহাজারি দুর্ভাগ্যজনক। গত ১৫ বছর ধরে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে সরকার। এই আর্তনাদ আহাজারি কতদিন চলবে?
তিনি বলেন, সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। ভয় দেখিয়ে গুম-খুন করে রাষ্ট্র চালাচ্ছে সরকার। মিথ্যাচারের জন্য বিশেষ নোবেল পুরষ্কার দেয়া উচিত সরকারকে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্দোলন দেখে সরকার ভয় পেয়ে গেছে তাই আবার লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। মানুষ জেগে উঠেছে। সবাই এগিয়ে আসুন দেশ রক্ষার জন্য। এমন আন্দোলন গড়ে তুলি এই সরকারের পতন ঘটিয়ে মানবতার সরকার গঠন করি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গুম-খুনের সাথে যারা জড়িত আছে তারা কিন্তু চিহ্নিত হয়ে গেছে। দেশে চিহ্নিত হয়েছে বিদেশেও চিহ্নিত হয়েছে। আপনাদের এই গুম-খুনের কারণে বাংলাদেশের র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আপনারা (আওয়ামী লীগ) বিশ্বের কাছে এ দেশকে ছোট করেছেন।
তিনি বলেন, যারা গুম হয়েছে তাদের ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনের কান্না থামবে না যতদিন এই অবৈধ সরকারকে পতন করতে পারি। যারা এই গুম-খুনের সাথে জড়িত তারা রেহাই পাবেন না। দেশের মাটিতে রেহাই পাবেন না। বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেছেন সেখানে গিয়েও রেহাই পাবেন না। আপনাদের বিচার দেশের মাটিতে হবে। এবং বিদেশের আদালতেও হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যারা গুম-খুন হয়েছে তাদের ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনের কান্না শুনেছি, অনেক রক্ত দিয়েছি। এই সরকারের পতনের জন্য যদি আরো রক্ত দিতে হয় দিব। তবুও ক্ষমতায় থাকতে দেবো না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো সময় গুম দিবস পালন করতে হবে এটা অবিশ্বাস্য। মানুষের কল্পনার বাইরে।
মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অন্যদের মধ্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহবায়ক আব্দুস সালাম, উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এছাড়াও বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নিখোঁজ পারভেজ রাসেলের মেয়ে রিদিসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।