কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির পাঁচবারের সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন ৯০ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন। কনের বয়স ৩৯ বছর।
সোমবার দুপুরে ৫ লাখ টাকা কাবিনে এ বিয়ে হয়। কনে মিনুয়ারা আক্তারের বাড়ি কুমিল্লা নগরীর দেশওয়ালীপট্টি এলাকায়। বিয়ের অনুষ্ঠানে উভয় পরিবারের সদস্য ও বরের সহকর্মীরা ছিলেন। নববধূকে নিয়ে সন্ধ্যায় প্রাইভেটকারযোগে আদালতপাড়ার নিজ বাড়িতে পৌঁছান মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন।
আইনজীবী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন জানান, স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি একা হয়ে পড়েন। ছেলে-মেয়েরা যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। এতে বৃদ্ধ বয়সে দেখভাল ও স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ছেলে-মেয়েরা ভাবলেন, তাদের বাবার একজন সঙ্গী প্রয়োজন। তাদের ইচ্ছায় তিনি বিয়ে করেছেন।
তিনি আরও জানান, ঘটকের মাধ্যমে কনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে হয়। এ বিয়েতে তিনি খুশি। সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। কনে মিনুয়ারা আক্তারও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য অতিথিসহ সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
ইসমাইল হোসেনের বড় ছেলে আইনজীবী ইসহাক সিদ্দিকি বলেন, ‘৭ বছর আগে আমার মা মাহমুদা বেগম মারা যান। এতে বাবা একা হয়ে পড়েন। আমরা ভাবলাম, তাকে দেখভালের জন্য একজন সঙ্গীর প্রয়োজন। তাই ভাই-বোনরা মিলে তাকে বিয়ে করিয়েছি।’
বিয়ে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যাওয়া কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘৫০ থেকে ৬০ জন বরযাত্রী গিয়ে বউ এনেছি। আমরা সবাই খুশি।’
অতিথি অ্যাডভোকেট খালেদা আক্তার মিনু বলেন, এ বিয়ের কাবিন হয়েছে ৫ লাখ টাকা। তার মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উসুল দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ বিয়ের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন কামনা করে দোয়া ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।কেউ কেউ আবার এতে আপত্তি তুলছেন।
জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী আসিফ আকবর যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মন্তব্য করেন-
কুমিল্লা বার এসোসিয়েশনের পাঁচবারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট ইসমাঈল হোসেন চাচা এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি। কোন অপরাধ করেন নি তিনি, নব্বই বছর বয়সে বিয়ে করে দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। কুমিল্লায় পাশাপাশি থাকি একই মহল্লায়, আত্মীয়তা না থাকলেও পারিবারিকভাবে আমরা সম্পৃক্ত। প্রায় ছয় ফিট লম্বা একহারা গড়নের ফর্সা সুন্দর মানুষ তিনি। আইনজীবী হিসেবেও যথেষ্ট প্রথিতযশা। চাচার পাঁচ ছেলে এক মেয়ে এবং নাতি নাতনীরা ঘটকের মাধ্যমে উনাকে বিয়ে দিয়েছেন ঘটা করে। চাচী মারা গেছেন আরো বেশ কিছু বছর আগে, দীর্ঘদিন অসুস্থ্যও ছিলেন। চাচার একাকীত্ব দূর করার জন্য সন্তানদের এই পদক্ষেপটা আমার কাছে অতুলনীয় মনে হয়েছে। নতুন চাচীও বলেছেন তিনি খেদমত করার মানসিকতা নিয়েই এই বিয়েতে সানন্দে রাজী হয়েছেন।
বাংলাদেশে এখন সব বিষয় নিয়ে খুব হাসাহাসি হয়।ফেসবুকে সভ্য আর অসভ্য একাকার হয়ে গিয়েছে। কোন একটা ঘটনা ঘটলে যাচাই বাছাই ছাড়াই কমেন্ট বক্সে ইয়ার্কী ফাজলামো শুরু হয়ে যায়। ঘটনার সাথে যে কোনভাবেই সম্পৃক্ত না সেও তার ফাতরা নাকটা ঢুকিয়ে দেবে, পারস্পরিক সম্মানবোধ আর সৌজন্যতা উঠেই গেছে প্রায়। একটা ইস্যু পেলেই জাতি এটা নিয়ে কয়দিন লেবু কচলানির মধ্যে থাকে কাজকাম বাদ দিয়ে। সারা পৃথিবীতে আমরা একটা নির্মম রসিকতা পরায়ণ জাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি। রাষ্ট্র সমাজ মিডিয়া জনগন সবই যেন ক্লাউনের ভুমিকায় এক কাতারে সামিল। আমরা ভুলে যাই প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে, আমাকে নিয়েও মানুষ মশকরা করতে পারে। যার জীবন তার চেয়ে পাবলিকের মনযোগ আরো বেশী। এক অদ্ভূত বেহায়াপনার সংস্কৃতি চলছে দেশে।
স্বামী স্ত্রী সম্পর্কটা ঐশ্বরিক। স্বামী আগে মৃত্যুবরণ করলে সর্বসংহা নারীজাতি পরিবারের সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন সহজে। স্ত্রী আগে মৃত্যুবরণ করলে সেই ভদ্রলোকটি হয়ে যান দুনিয়ার সবচেয়ে একা মানুষ। একটু চোখ বন্ধ করে ভবিষ্যত বাস্তবতাটা ভাবুন, তারপর চোখ খুলে আশেপাশের উদাহরনে নজর দিন, একবার নিজেকে মিলিয়ে নিন সেই সঙ্গীন পরিস্থিতির সাথে। যদি মানুষ হোন তাহলে হাসি ফাজলামো মশকরার ভাবনা উড়ে যাবে, অমানুষ হলে আর কোন কথা নেই। যতোই চেঁচামেচি করি বেগমের সাথে, আমি নিজেও চাইনা আমার আগে বেগম আল্লাহর প্রিয় হয়ে যাক। স্বার্থপরের মতই নিজের একাকীত্বের ভৌতিক পরিস্থিতি উপলদ্ধি করে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাই। এই ফেসবুক আমাদের আর কত অসভ্যতার চোরাবালিতে নিমজ্জ্বিত করবে জানিনা, একটু নিজের মত ভালভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে যারা দাঁত ক্যালানো মজার খেলা মনে করে- এরা মানুষের পর্যায়ে পরেনা কখনোই। শ্রদ্ধেয় এডভোকেট ইসমাঈল হোসেন চাচা’র সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ু কামনা করি, চাচীও আনন্দে থাকুন।ভালবাসা অবিরাম