ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদ হোসেন মোল্লা কালাম। পরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। আপিল বিভাগ তার জামিন স্থগিত করে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই আদেশের পর প্রায় দেড় মাস পার হলেও আসামি আর আত্মসমর্পণ করেননি। এমনকি পুলিশও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ বিষয়ে বরিশাল বিমানবন্দর থানার ওসি কমলেশ চন্দ্র হালদার গতকাল মঙ্গলবার আমাদের সময়কে বলেন, ‘কাউন্সিলর মোল্লা কালামের জামিন বাতিলের একটি আদেশের কপি আমাদের কাছে এসেছে। তিনি এখন পলাতক রয়েছেন। আমরা তাকে ধরার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বিসিবির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মগড়পাড়া এলাকায় ৩০ বছর বয়সী এক নারীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে কাউন্সিলর আজাদ হোসেন ওরফে কালাম মোল্লা ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। এমন অভিযোগে ওই নারী বাদী হয়ে গত ১৪ জানুয়ারি বিসিবির বিমানবন্দর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। ওই দিন বিকালে জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা থেকে আজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আদালতে হাজির করা হলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর হাইকোর্টে মিথ্যা তথ্য দাখিল করে জামিন নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী এসএম আমিনুর রহমান।
আমিনুর রহমান বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে আসামি মোল্লা কালাম জামিন নিয়েছেন। ভিকটিম বিয়ে করেননি। অথচ ভিকটিম বিয়ে করে সংসার করছেন মর্মে একটি মিথ্যা কাগজ বানিয়ে জামিন নিয়েছেন।
গত ৩০ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামি মোল্লা কালাম। পরে এই জামিন আবেদনের সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারিতে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন। সম্পূরক আবেদনে, মামলার বাদীর (ভিকটিমের) বিয়েসংক্রান্ত এফিডেভিটের একটি কপি দাখিল করা হয়। এফিডেভিটের কপিতে ফরিদপুর সদরের পুকুরিয়া গ্রামের সবুজ হাওলাদারের সঙ্গে বাদীর বিয়ে হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। সম্পূরক আবেদনে বলা হয়, মামলার বাদী ২০১৯ সালের ৭ মে বরিশালে নোটারি পাবলিকের সামনে হাজির হয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে সবুজ হাওলাদার নামে একজনকে বিয়ে করেছেন এবং বর্তমানে তারা সংসার করছেন।
এই আবেদনের শুনানি করে গত ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ আসামি মোল্লা কালামকে জামিন দেন। একই সঙ্গে তাকে কেন এ মামলায় স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামির জামিন মঞ্জুর করা হয়। জামিন পেয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কারামুক্তি পান কাউন্সিলর মোল্লা কালাম।
পরে এই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত ৩ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন জানায়। এরই মধ্যে গত ২৯ মে এই ধর্ষণের ঘটনায় করা ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দাখিল করেছে পুলিশ। রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরির পরীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ডিএনএ পরীক্ষায় সালোয়ারে প্রাপ্ত বীর্যের দুটি কর্তিত অংশের একটি হতে একজন পুরুষের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়, যা মো. আজাদ হোসেন কালাম মোল্লার ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে যায়।’ পরে গত ১৩ জুন আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি করে আসামি মোল্লা কালামকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন।
আদেশে আপিল বিভাগ বলেছেন, এ মামলায় জামিন বিষয়ে যে রুল জারি করেছে, তা মেরিটের ভিত্তিতে শুনানি করলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। এ কারণে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন স্থগিত করা হলো। আসামিকে বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় সিএমএম আসামিকে কারাগারের পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু এর পর ওই আসামি আর আত্মসমর্পণ করেননি।
এদিকে কাউন্সিলর মোল্লা কালামের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার আইনজীবী শেখ খায়রুল আনাম আমাদের সময়কে বলেন, আসামিপক্ষ থেকে ভিকটিমের বিয়ের নোটারি সংক্রান্ত কাগজ আমাকে দিয়েছে। সেটি আমি আদালতে দাখিল করি। তাতে সন্তুষ্ট হয়ে হাইকোর্ট ওই আসামিকে জামিন দেন। পরে আপিল বিভাগ তার সেই জামিন বাতিল করেছে। তবে বিয়েসংক্রান্ত নোটারির কাগজ মিথ্যা কিনা, সেটি আমি জানি না।