বুধবার, ০১:৪০ অপরাহ্ন, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বরেণ্য সাতারু মিহির সেনের প্রয়াণ বার্ষিকী

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১১ জুন, ২০২২
  • ২০৯ বার পঠিত

বাঙালি ভেতো, ঘরকুনো ও অলস। এমন কথাই প্রচলিত বেশি। তবে তা মিথ্যা প্রমাণে সফল বাঙালিও কম নয়।

আজকের দিনে মনে করা যেতে পারে পুরুলিয়ায় জন্ম নেওয়া ইতিহাস স্রষ্টা বাঙালি সাতারু ও আইনজীবী মিহির সেনকে। ৬৬ বছর বয়সে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৭ সালের এই ১১ জুন পরলোকে পাড়ি জমান মিহির সেন।

১৯৫৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি প্রথম এশিয়ান হিসেবে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। পরে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে রচিত হয় তার নাম। শুধু ইংলিশ চ্যানেল নয়, মিহির সেন হচ্ছেন একমাত্র সাতারু যিনি এক বছরে (১৯৬৬ সালে) ৫টি মহাদেশের ৫ টি দীর্ঘ জলাশয় অতিক্রম করেন।

সংগ্রামী জীবনের জন্য স্মরণীয় মিহির সেন। ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর ডাক্তার রমেশচন্দ্র সেন ও লীলাবতী সেনের ঘরে জন্ম তার। মাত্র ৮ বছর বয়সে মায়ের উৎসাহে পড়াশোনার জন্য চলে আসেন কটক। দুরপাল্লার সাতারু হবেন এ ভাবনা ছিল না তার। ছোটবেলা থেকে আইনজীবী হওয়ার বাসনা মিহিরের। হেঁটেছেনও সে পথে। ভুবনেশ্বরের উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এখানেই থেমে যেতে পারতেন। কিন্তু পণ ছিল আরও শিখবেন, আরও পড়বেন। বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েক পাশে দাঁড়ান এ মেধাবীর। তার সহায়তায় ১৯৫০ সালে জাহাজে বিলেত যাত্রা। মনে ছিল অনেক স্বপ্ন। আর যাত্রাকালে হাতে ছিল একটি তৃতীয় শ্রেণির টিকিট।

বিলেতের জীবন বিলাসপূর্ণ ছিল না মিহিরের। লিংকন্স ইনে ব্যারিস্টার ডিগ্রির জন্য ভর্তি হন। ভিন দেশে টিকে থাকার সংগ্রামে রেল স্টেশনে কাজ করতেন কুলির। কিন্তু থামেনি তার পড়া। ১৯৫৪ সালে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন মিহির সেন।

সাতারে সংশ্লিষ্টতা ছিল না তখনও। মিহির ছাত্রাবস্থায় পত্রিকায় ইংলিশ চ্যানেল জয়ী প্রখ্যাত মার্কিন নারী সাতারু ফ্লোরেন্স চ্যাডউইককে নিয়ে একটি লেখা পড়েন। নিভৃতে নিজের মতো অনুশীলন করতে থাকেন দুরপাল্লার সাতার।

দুনিয়া মিহির সেনকে চেনে ১৯৫৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। এ দিন তিনি ১৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সাতরে ডোভার থেকে ক্যালাইস পাড়ি দিয়ে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন।

মিহির ভারতে ফেরেন জাতীয় বীর হয়ে। ১৯৫৯ সালে প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু কর্তৃক “পদ্মশ্রী” পদকে ভূষিত হন। কিন্তু বিধি তার জন্য নির্ধারিত রাখেন আরও অনেক কিছু। তা ছিল সাতার, আইন পেশা ও রাজনীতিকেন্দ্রিক।

১৯৫৮ সালে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের পর ভারতে ফিরে আইন পেশায় নিয়োজিত হন মিহির সেন। কলকাতা সুপ্রিম কোর্টে বর্ণবাদী প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তার দ্রোহে ঔপনৈবেশিক আইন পাল্টাতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। মূলত ফৌজদারি আইন নিয়ে আদালতে লড়তেন মিহির সেন। পেশাজীবনে অর্থ ও সাফল্য আসে দু’হাত ভরে।

ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে মিহির সেনের স্বপ্ন যেন পূরণ হয় না। তার প্রতিজ্ঞাও দূরপাল্লার। পাশে দাঁড়ান ইন্দিরা গান্ধি। সহায়তা করে ভারতের নৌবাহিনী। ১৯৬৬ সাল, এই এক বছরে মিহির সেন একে একে অতিক্রম করেন পাক প্রণালী, জিব্রালটার প্রণালী, ডারডেনিলস উপসাগর,বসফোরাস প্রণালী ও পদ্মা চ্যানেল। এ কৃতিত্বে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে মিহির সেনের নাম রচিত হয়। ১৯৬৭ সালে ইন্দিরা গান্ধি তাকে “পদ্মভূষণ” খেতাবে ভূষিত করেন।

দুঃখজনক হলেও সত্য নানা কারণেই স্বভূমে প্রত্যাখ্যাত হন ভূবন জয়ী বাঙালিরা। মিহির সেনের জীবনের শেষ বেলায়ও তা ঘটে। ১৯৭৭ সাল থেকে কর্তৃত্বময় জ্যোতি বসুর সঙ্গে বিবাদ ঘটে। সিপিএম’ এর একচ্ছত্রতার বিপরীতে কিছুই করার থাকে না এই মানুষটির। মিহির সেনের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়, বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। কর্পদকশূন্য হয়ে পড়েন তিনি।

১৯৯৭ সালের ১১ জুন শুধু তার দেহটুকুই অন্তর্লীন হয়। তার কীর্তি ও দূরকে জয় করার সক্ষমতা বাঙালি মনে চিরঞ্জীব।

সুত্র-Dhakatribune

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com