চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি এবং স্যামসাং। এই বছর থেকে ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির চিপসেট উৎপাদনের কথা জানিয়েছিল তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী টিএসএমসির আগেই তিন ন্যানোমিটার প্রক্রিয়ায় চিপ উৎপাদন শুরু করেছে স্যামসাং। কম বিদ্যুৎ খরচে আরও ভালো পারফরম্যান্সের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এই নির্মাণ প্রযুক্তি। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- আজহারুল ইসলাম অভি
রয়টার্স জানিয়েছে, তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিকে (টিএসএমসি) পেছনে ফেলে প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির চিপ উৎপাদন শুরু করেছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। চিপ উৎপাদনে এবার গেট অল অ্যারাউন্ড (জিএএ) ট্রানজিস্টর অবকাঠামো ব্যবহার করছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্টটি। এ অবকাঠামো অধিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বলে জানা গেছে। নতুন এ মাইলফলকের মাধ্যমে স্যামসাং চিপের আকৃতি কমানোর পাশাপাশি এর কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে টিএসএমসি থেকে এক ধাপ এগিয়ে গেল। তবে এর আগে চলতি বছর শেষে ৩ ন্যানোমিটারের চিপ উৎপাদন করবে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) এমন খবর বেশ সাড়া ফেলেছিল প্রযুক্তি জগতে। খবরে বলা হয়েছিল, টিএসএমসি ৩ ন্যানোমিটার প্রসেস প্রযুক্তির মাধ্যমে ৩০-৩৫ হাজার ওয়েফার তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ চিপ ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যাপল তাদের আইপ্যাড বাজারজাত করতে পারে বলে ডব্লিউসিসিএফটেক সূত্রে জানা গেছে। ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির চিপ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করতে স্যামসাং ও টিএসএমসি উঠেপড়ে লাগলেও স্যামসাং আগে বাণিজিক উৎপাদন শুরু করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্যবিষয়ক প্রকাশনা ব্লুমবার্গ। এই প্রযুক্তিতে টিএসএমসির চিপ বাণিজ্যিক উৎপাদন এ বছরের দ্বিতীয় অংশে শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। স্যামসাং দাবি করছে ৫ ন্যানোমিটারের উৎপাদন প্রক্রিয়ার চেয়ে ৪৫ শতাংশ কম বিদ্যুৎ খরচ হয় এই উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত চিপগুলোর পারফরম্যান্স বাড়বে ২৩ শতাংশ এবং আকারে ১৬ শতাংশ ছোট হবে চিপগুলো। আধুনিক কাঠামো ও অধিক কার্যকর চিপের ব্যাপক উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের প্রতিফলন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটির চিপ ফাউন্ড্রি ব্যবসার প্রধান চই সি ইয়াং বলেন, উৎপাদন কার্যক্রমে পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শীর্ষস্থান ধরে রাখায় স্যামসাংয়ের বাজার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশ্বের প্রথম ৩ ন্যানোমিটার প্রসেসে উৎপাদিত চিপের মাধ্যমে আমরা এ অবস্থান ধরে রাখতে চাই। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, অধিক কার্যক্ষমতা, কম বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিতের পাশাপাশি মোবাইল প্রসেসরের পরিধি বিস্তারে স্যামসাং প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ন্যানোশিট ট্রানজিস্টর ব্যবহার শুরু করেছে। তবে নতুন চিপগুলো কারা কিনবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশে প্রতিষ্ঠানটি অপারগতা প্রকাশ করেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে যখন বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ সংকট চলমান, তখন স্যামসাং নতুন এ ঘোষণা দিল। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ট্রেন্ডফোর্স জানায়, গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় এ বছর প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় হয়েছে ৫৩৩ কোটি ডলার, যা প্রায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কম। স্যামসাং জানিয়েছিল, মেমোরি চিপ ছাড়া সেমিকন্ডাক্টর খাত থেকে স্যামসাংয়ের আয় ২৬ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ওনে পৌঁছেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি ফাউন্ড্রি ব্যবসার কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি। প্রথম প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের বাজার হিস্যা আগের প্রান্তিকে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। যেখানে টিএসএমসির হিস্যা ৫২ দশমিক ১ থেকে ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।