বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। সিনেমার আঁতুরঘর নামেও সর্বমহলে পরিচিত। সারা বছরই চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকে এই এফডিসি। কেপিআইভুক্ত এই আঁতুরঘরের মধ্যেই রয়েছে সাতটি সংগঠনের কার্যালয়। এগুলো হলো- প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, চিত্রগ্রাহক সংস্থা, সিডাপ, ফিল্ম এডিটরস গিল্ড ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ব্যবস্থাপক সমিতি। আর এসব সংগঠনের কাছে কার্যালয়ের ভাড়া ও বৈদ্যতিক বিল বাবদ বিএফডিসির পাওনা কোটি টাকার উপরে!
শুনতে অবাক লাগলেও, বারবার নোটিশ পাঠিয়েও এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। এর মধ্যে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি ও শিল্পী সমিতি কিছুটা এগিয়ে আসলেও অন্য সংগঠনগুলো যেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে! বারবার চিঠি দিয়েও মিলছে না কোনো সাড়া। তাদের এই বকেয়া বিলের নথিগুলো এরই মধ্যে অনলাইন’র হাতে এসে পৌঁছেছে।
সেখানে দেখা যায়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিকে গেল বছর ৮ সেপ্টেম্বর তাগিদপত্র পাঠিয়েছে এফডিসি। যেখানে গত বছর জুলাইয়ে রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ ও পানির বিলসহ বকেয়া রয়েছে ১৭ লাখ ২২ হাজার ৯ শত ৬৭ টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিল আছে- ৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৮৭ টাকা। বকেয়া এই বিলের মধ্যে গত বছর বিদ্যুৎ বিল ৫৫ হাজার ৩৪২ টাকা পরিশোধ করেছে তারা। বাকি আছে ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৫ টাকা।
এদিকে, পরিচালক সমিতিতে বকেয়া আছে ২৬ লাখ ৭ হাজার ১৪৫ টাকা। যার একটি টাকাও পরিশোধ করেনি তারা। আর ফিল্ম এডিটরস গিল্ডের কাছে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫৬ টাকা। চিত্রগ্রাহক সংস্থার কাছে বকেয়া আছে ৮ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ টাকা ও সিডাপ’র কাছে আছে ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৯ টাকা। এ ছাড়াও এফডিসিরও কিছু বকেয়া বিল রয়েছে। সব হিসাব কষলে চলতি বছর গড় হিসেবে বিল দাঁড়াবে আরও প্রায় ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৪ টাকা। আর সর্বমোট বকেয়া বিল লভ্যাংশ হারে দাঁড়াবে প্রায় কোটি টাকার উপরে। এর মধ্যে আবার চলতি বছর জানুয়ারিতেও এফডিসির পক্ষ থেকে একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে সমিতিগুলোর কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র বলেন, ‘আমরা বারবার তাদের পাওনা টাকার জন্য চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মিলছে না।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পরিচালক সমিতির সভাপতি নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে। তার ভাষ্য, ‘এটি মূলত আমাদের কার্যালয় নয়। এটি আবদুল জব্বার খান পাঠাগার। এখানে আমরা বসি পাঠাগারের জন্যই। এর জন্য বিল চাওয়াটাই তো অন্যায়। আমরা আছি বলেই এখানে বিনিয়োগ করার জন্য প্রযোজকরা আসেন। সিনেমার কাজে গতি পায়। এখন যদি বিল পরিশোধ করে আমাদের এখানে থাকতে হয়! তাহলে সেটা কেমন হয়ে গেল না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ধরা হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। এসব খচর দেওয়ার শর্তে কক্ষগুলো বিভিন্ন সমিতিকে ভাড়া দেয় বিএফডিসি। ভাড়াসহ বাড়তি খরচ কয়েক দফায় বেড়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেই টাকা পরিশোধ করছে না সমিতিগুলো।
প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘আমরা হচ্ছি উনাদের (এফডিসি)র কাস্টমার। আমাদের অফিসগুলোতে কাজের হিসেব-নিকেষ, জরুরি জিনিসপত্র সব কিছুই রাখা লাগে। এসব সুবিধা যদি আমাদের না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা এখানে আসবো কেন? আমি মনে করি, এই বিল কারই দেওয়া উচিত না।’
সমিতিগুলোর বকেয়া বিলের বিষয়ে বিএফডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সমিতির সংশ্লিষ্টদের পাঠাগারে বসার রুম দিয়েছিলাম। তাদেরই প্রয়োজনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সেটিকে অফিস বানিয়ে রেখেছে। সেখানের প্রতিনিয়তই তাদেরকে বিলের চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। তারা সমাজের সংবেদনশীল অংশ। আমরা আশা করি, তারা এগুলো শোধ করে দেবেন।’
তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বেসরকারি কার্যালয়ের এই বকেয়া বিল কি আদৌ পরিশোধ হবে! এর উত্তর কারও জানা নেই।