কোনো কারণ দর্শানো (শোকজ) ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মচারীকে অপসারণ করা সংক্রান্ত ৫৪(২) বিধি বহাল থাকছে। ফলে দুদকের সাবেক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন আর চাকরিতে ফিরতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এর আগে বিধিটি বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
দুদকের আপিল মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির আপিল বিভাগ এ রায় দেন।
আদালতে আজ শরীফের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো: সালাহউদ্দিন দোলন। তার সাথে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো: খুরশীদ আলম খান।
শুনানি শেষে দুদকের আইনজীবী মো: খুরশীদ আলম খান জানান, আজকের আপিল মঞ্জুরের ফলে শরীফ উদ্দিন চাকরিতে ফিরতে পারবেন না।
আইনজীবীরা বলেন, কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ করতে দুদকের ক্ষমতার সেই ৫৪(২) বিধিটি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বহাল রইল।
আজকের এ রায় অনুযায়ী ৫৪(২) বিধিটি আবার টিকে গেলো উল্লেখ করে দুদকের আইনজীবী মো: খুরশীদ আলম খান বলেন, এর ফলে দুদকের ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ আইনগতভাবে সঠিক।
২০০৮ সালের দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪ (২) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দর্শাইয়া কোনো কর্মচারীকে নব্বই দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’
২০০৮ সালের দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) বিধি অনুসারে মো: আহসান আলী নামের দুদকের এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। তিনি ৫৪ (২) বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন। সে রিটে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর এ বিধি বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে, যা ২০১৬ সালের নভেম্বরে খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এর বিরুদ্ধে পরের বছর দুদক পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে। পরে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর দুদককে আপিল করার অনুমতি দেন। আর এ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। পরে দুদক আপিল করে।
এদিকে দুদকের উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত মো: শরীফ উদ্দিনকে গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি অপসারণ করলে তিনিও দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধি ও চাকরিচ্যুতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। পরে ১১ এপ্রিল তা শুনানির জন্য ওঠে। কিন্তু তখন পর্যন্ত মো: আহসান আলীর মামলায় দুদকের দুদকের রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় শরীফের রিটের শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে এ মুলতবি আদেশের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৬ জুন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন শরীফ।
গত ৩ জানুয়ারি শরীফের সেই লিভ টু আপিল ও দুদকের আপিল শুনানির জন্য একসাথে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। এরপর একোথে দুই আবেদনের শুনানি শেষে গত ২ মার্চ রায়ের জন্য ১৬ মার্চ দিন ঠিক করে আপিল বিভাগ।