ঈদ মানে আনন্দ। এ আনন্দ হঠাৎ করেই নিরানন্দে পরিণত হতে পারে শারীরিক কিছু সমস্যায়। এর মধ্যে ব্যাকপেইন অন্যতম। ঘাড়, পিঠ থেকে কোমর হয়ে নিতম্ব ও অন্যান্য স্থানে যে কোনো কারণে ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা যে শুধু বয়স হলেই হয়, তা নয়। এ অসুখের জন্য নানা কারণ থাকতে পারে। যেমন- ঈদের দিন বিভিন্ন পজিশনে নড়াচড়ার কারণে হতে পারে ব্যাকপেইন। যখন আমরা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, তখন আমাদের মেরুদ-ে চাপ পড়ে ১০০ কেজি। যখন আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াই এবং সামনের দিকে ঝুঁকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডে প্রেসারের পরিমাণ ১৫০ কেজি। যখন সামনের দিকে ঝুঁকে দাঁড়ানো অবস্থায় কোনো বস্তু তোলার চেষ্টা করি, তখন মেরুদ-ে প্রেসারের পরিমাণ ২২০ কেজি। যখন আমরা চেয়ারে সোজা হয়ে বসে থাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডে প্রেসারের পরিমাণ ১৪০ কেজি। যখন আমরা চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় সামনের দিকে ঝুঁকি, তখন আমাদের মেরুদ-ে ১৮৫ কেজি প্রেসার পড়ে। আমাদের মেরুদণ্ডে সবচেয়ে বেশি প্রেসার পড়ে, যখন আমরা চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় ২০ ডিগ্রি সামনে ঝুঁকে ২০ কেজি ওজনের কোনো বস্তু হাত দিয়ে টেনে তুলি, তখন মেরুদ-ে প্রেসারের পরিমাণ ২৭৫ কেজি।
এছাড়া অপুষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত পুষ্টি কখনো কখনো শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয়। বেশি খাবার খেলে তা শরীরে শুধু বর্জ্য বাড়ানো ছাড়া বাড়তি কোনো উপকারে আসে না। যারা খুব বেশি মাংস খেতে পছন্দ করেন, তাদের ক্ষেত্রে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। অতিরিক্ত প্রোটিনে শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। শরীরের জয়েন্টগুলোয় ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়, তখন বিভিন্ন গিরা ফুলে যায় ও সেখানে ব্যথা করে। এটা গেঁটেবাত বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস সেই সঙ্গে ক্যালসিয়ামের অভাবে ‘ব্যাকপেইন’ দেখা যেতে পারে।
ব্যাকপেইন যে কোনো বয়সের যে কারও হতে পারে। কোথাও পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত, বার্ধক্য, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, পুষ্টির অভাব, অতিপুষ্টি এরকম আরও কিছু কারণে ব্যাকপেইন হতে পারে। ব্যাকপেইন হলে ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় ব্যথা প্রকাশ পেতে পারে। ৪০ পেরনো নারীর ব্যাকপেইনের ঝুঁকি বেশি। এর পেছনে কতকগুলো কারণ আছে। যেমন- শরীরে হরমোনের পরিবর্তন, ঝুঁকে কাজ করা, মাতৃত্বকালীন, ভারী জিনিস তোলা, পুষ্টির অভাব। এছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলেও মেরুদ-ে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে বয়স্ক মানুষের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা দেখা দেয়। কোমরের হাড় সরে যাওয়া, মেরুদণ্ডে হাড়ক্ষয় বা বৃদ্ধি, ওজন বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিসের কারণে কোমর ও ঘাড়ে ব্যথা দেখা যেতে পারে।
ব্যাকপেইনে করণীয় : খাবারের পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখুন বা অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। যতটা সম্ভব চর্বি এড়িয়ে চলুন বা কম খাবার চেষ্টা করুন। সবজির কিছু আইটেম রাখুন মেন্যুতে, পাশাপাশি সালাদ খান। ডায়েটে রাখুন গ্রিন-টি, ব্ল্যাক কফি ও গরম পানি ও লেবুপানি। দাওয়াত চাইলেও যেহেতু এড়িয়ে যেতে পারবেন না, তাই দাওয়াত থেকে ফেরার পর মেটাবলিজম বাড়াতে পান করে নিতে পারেন ব্ল্যাক কফি বা গ্রিন-টি। সকালে ঘুম ভেঙেই হালকা গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে পান করুন। শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দেবেন না। নিয়মিত রুটিন খানিকটা হলেও ধরে রাখুন ঈদের মধ্যেও। দিনে ২০ মিনিট হাঁটুন। সঙ্গে নিজেই করুন ঘরের কাজগুলো। এতে করে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকবে না। পরিমিত অর্থাৎ দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা বিশ্রামের অভ্যাস করুন।
লেখক : প্রফেসর এবং চেয়ারম্যান
ডিপার্টমেন্ট অব ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন, দি ইউনিভার্সিটি