রাতারাতি সেলিব্রেটি বনে যাওয়া যায় এমন একটি অ্যাপের নাম টিকটক। বাড়ন্ত বয়সের ছেলেমেয়েরা এই নেশায় এখন যেন নিরন্তর মরিয়া উঠেছে। অথচ এই টিকটক বানাতে গিয়ে কত প্রাণ যে ঝরে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। তথ্যমতে, গত ১২ জুলাই কুমিল্লায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে টিকটক করতে গিয়ে পা পিছলে ১৫ বছরের কিশোর মেহেদী হাসানের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে টিকটক ভিডিও আপলোডকে কেন্দ্র করে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত খুন হয়।
গত ২ মার্চ রাজবাড়ী জেলার কালোখালী উপজেলায় হোসেন নামে ১৬ বছরের কিশোর রেলব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে টিকটক বানাতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে রেলের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়। ৮ মে নড়াইলের কালিয়ায় টিকটক করতে বাধা দেয়ায় মায়ের সাথে অভিমান করে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করে সুমি আক্তার (১৯)। ১৬ মে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার শহরের লাল ব্রিজের অদূরে হৃদয় (১৫) নামে এক কিশোর খুলনাগামী নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে টিকটক বানাতে গিয়ে কাটা পড়ে মারা যায়। ২২ মে নীলফামারীর সৈয়দপুরে টিকটক করতে গিয়ে নদীতে ডুবে মৃত্যু হয় মুস্তাকিম ইসলাম (১৬) নামে এক কিশোরের। গত ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে নির্মাণাধীন তিনতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে অনিল (১৪) নামে এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এমন হুমকির মধ্যে যখন তরুণ সমাজ তখন এই অ্যাপকে নিয়ন্ত্রণ আনা অধিক প্রয়োজন, তা না হলে যুবক সমাজ একদিন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় ৭৫টি ভাষায় এই টিকটক অ্যাপটি বানানো হয়েছে। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, গোটা পৃথিবীতে এই অ্যাপটি প্রায় ৮০০ মিলিয়নবার ডাউনলোড হয়েছে।
সুতরাং আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে কুরআন ও হাদিসের নীতিমালা অনুসরণ করা কাম্য।
প্রিয় নবীর অনুসরণ ও অনুকরণ ছাড়া ধরাধামে কেউ উত্তম চরিত্রের অধিকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আজহাব-২১)
হাদিস শরিফে রাসূল সা: ইরশাদ করেন ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)
আমাদের সমাজের একশ্রেণীর মানুষ আছে যারা মানুষকে গুনাহের দিকে আহ্বান করে নিজেরাও ধ্বংসে নিপতিত হচ্ছে সাথে অন্য মানুষকে ধ্বংসের গহ্বরে তলিয়ে দিচ্ছে যা একটি সমাজ ও জাতির জন্য বিরাট হুমকিস্বরূপ।
আর অশ্লীলতা, ঠাট্টা-বিদ্রুপে পরিপূর্ণ এসব ভিডিও তৈরি করা খুবই জঘন্য পাপ। দুনিয়া ও আখিরাতে যার জন্য ভয়াবহ শাস্তিও ঘোষণা এসেছে। যতজন এই ভিডিওগুলো দেখবে সবার পাপের একটি অংশ ভিডিও নির্মাতা পেতে থাকবে। এমনকি মৃত্যুর পরও এই গুনাহ জারিয়াহ বা চলমান হিসেবে আমলনামায় যোগ হতে থাকে।
এ ব্যাপারে প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে নেককাজের দাওয়াত দেবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; যারা তার দাওয়াত পেয়ে নেককাজ করবে অথচ তাদের সওয়াবের সামান্যও হ্রাস পাবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি মানুষকে গুনাহের কাজে আহ্বান করবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ গুনাহ পাবে, যারা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গুনাহের কাজ করবে। অথচ তাদের গুনাহ হ্রাস পাবে না।’ (মুসলিম শরিফ-৬৯৮০)
সে জন্য অশ্লীলতা, ঠাট্টা-বিদ্রুপে পরিপূর্ণ এসব ভিডিও তৈরি করা খুবই জঘন্য পাপ। দুনিয়া ও আখিরাতে যার জন্য ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা এসেছে।
সুতরাং নিজেরা এ ব্যাপারে হুঁশিয়ার হন। তা হলে একটি পরিবার একটি সমাজ সুন্দর হয়ে উঠবে খুব সহজে। জাগরণের এই জাগ্রত জোয়ারে স্ফুরিত আলোর দিকে ভেসে যাক তরুণ সমাজ। তবে সার্থক হবে আমাদের পরিবার, পরিজন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সব প্রকার গুনাহ থেকে হিফাজত করুন।