দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনঅসন্তোষ নতুন নয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল সেবা, অযৌক্তিক দাম, মেয়াদ শেষে অব্যবহৃত ডাটা পরের প্যাকেজে যুক্ত না হওয়াসহ নানাবিধ কারণে অসন্তোষ সেবাগ্রহীতাদের। এ নিয়ে জনপরিসরে নিন্দা-সমালোচনা আর সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আলাপ-আলোচনাও এযাবৎকালে কম হয়নি। পরিতাপের বিষয়, কাজের কাজ হয়নি কিছুই। উপরন্তু গত দেড় বছরে নতুন করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটররা, যা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, গত ১৮ মাসে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট ডাটা প্যাকেজের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ মূল্য পর্যালোচনায় এ চিত্র উঠে আসে। বিভিন্ন অপারেটরের এক বছরের ডাটা প্যাকেজ মূল্য বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি এটি তৈরি করে। দেখা যায়, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক—এই চার মোবাইল অপারেটরই বিভিন্ন মেয়াদে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে। পিছিয়ে নেই রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটরও। এ মূল্যবৃদ্ধি সব ধরনের গ্রাহকের ওপর সরাসরি নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া সেবার মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।
মোবাইল অপারেটরদের এ অবস্থানের কেন পরিবর্তন হচ্ছে না কিংবা সেবাদানের প্রশ্নে তারা কেন ‘গ্রহণযোগ্য’ বা ‘যৌক্তিক’ অবস্থান নিচ্ছে না বা নিতে পারছে না? তারা যেন গ্রাহকদের সাশ্রয়ে ভালো সেবা দিতে পারে, সেজন্য গত দেড় বছরে সরকারের তরফ থেকে নানা রকমের সুযোগ-সুবিধার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কেন করা হয়েছে? তারা যেন বিশেষ করে ইন্টারনেটের দাম ও মান কমাতে পারে। কিন্তু তারা হাঁটছে উল্টোপথে। খোদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী মোবাইল ইন্টারনেটের দাম না কমানোয় অপারেটরদের যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেগুলো ‘পুনর্বিবেচনা’ করা হবে বলে সতর্ক করেন। তিনি একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, সরকার এরই মধ্যে অপারেটরদের ডিডব্লিউডিএম এবং ডার্ক ফাইবার সুবিধা দিয়েছে। এ অবস্থায় মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের দাম না কমানোর কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন, ‘যেসব ট্রান্সমিশন সুবিধা অপারেটররা চেয়েছিল, সেগুলো আমরা দিয়েছি। এখন তারা দাম না কমালে তাদের দেওয়া পুরোনো বকেয়া এবং বর্তমান সুবিধাগুলো ফের আলোচনায় আনা হবে।’ তার মানে, সরকারের তরফ থেকে সুবিধা বাগিয়ে নেওয়ার কাজটি অপারেটরগুলো ঠিক মতোই করেছে। কিন্তু বিনিময়ে গ্রাহকসেবার বিষয়ে তারা উদাসীন! এমনকি কাজ হচ্ছে না সরকারের সতর্কবার্তায়ও!
আমরা মনে করি, মোবাইল অপারেটরদের নানা রকমের সুবিধা দেওয়ার পরও দাম না কমিয়ে বৃদ্ধির ঘটনা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। অত্যন্ত জনঘনিষ্ঠ এ ইস্যুতে অপারেটরগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তার আগে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি এবং ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কেও জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। কেননা প্রতিষ্ঠান দুটি সেবা প্রদান এবং নীতিমালা প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত। অবশ্য এরই মধ্যে বিটিআরসিকে মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে। মনে রাখা জরুরি, মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্যবৃদ্ধি গ্রাহকদের নানাভাবে ভোগান্তির সৃষ্টি করে। দাম বাড়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফল ইতিবাচক কিছু নয়। আমাদের প্রত্যাশা, মোবাইল ইন্টারনেটের দাম ও মান নিয়ে জনস্বার্থের কথা বিবেচিত হবে।