শনিবার, ১১:১৮ অপরাহ্ন, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৯ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বিচারাদেশ নিয়ে নয়ছয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১০ বার পঠিত

কাস্টম আইন উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান ও কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিনের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে বিচারাদেশে নয়ছয়ের মাধ্যমে আমদানিকারকদের সুবিধা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আইনে একই পণ্য চালানে দুবার বিচারাদেশের সুযোগ না থাকলেও মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য চালানে প্রথমবার বড় অঙ্কের জরিমানা করার পর অবৈধভাবে আরেক দফায় বিচারাদেশ দিয়ে জরিমানা অর্ধেক করে দেন যুগ্ম কমিশনার মারুফুর রহমান। অন্যদিকে, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করায় কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন বিচারাদেশে প্রায় আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করলেও পরে মাত্র ৪ হাজার ২২৪ টাকায় শুল্ক-কর নিয়ে পণ্যের চালান খালাসের অনুমতি দেন, যা কাস্টম আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ-সংক্রান্ত নথি কালবেলার হাতে রয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর খান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল রাজস্ব ফাঁকি দিতে কনটেইনার সিল আমদানির ঘোষণা দিয়ে পিভিসি সিল নিয়ে এলে চালানটি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখা আটকে দেয়। পরে এই চালানের বিচারাদেশে যুগ্ম কমিশনার মারুফুর রহমান মিথ্যা ঘোষণার জন্য মোট ১২ লাখ টাকা (১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ২ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা) জরিমানা করেন এবং যথাযথ শুল্কায়ন সাপেক্ষে পণ্য খালাসের আদেশ দেন। কিন্তু পরে তিনি অবৈধ সুবিধা নিতে নিজের প্রভাব খাটিয়ে সেই বিচারাদেশ গায়েব করে ফেলেন এবং নতুন বিচারাদেশ দেন, যেখানে জরিমানা ১২ লাখ থেকে কমিয়ে ৬ লাখ টাকায় পণ্যের চালানটি ছেড়ে দেন। অথচ আইন অনুযায়ী একবার বিচারাদেশ দেওয়ার পর তা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আদেশ নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকলে আপিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু খান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ঘটনায় আপিল ছাড়াই জরিমানা কমানো হয়েছে।

শুধু বিচারাদেশ জালিয়াতিই নয়, যুগ্ম কমিশনার মারুফুর রহমান কাস্টম হাউসের জেটি থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর জেটি শাখা সরালেও তাকে কাস্টম হাউসের আরেকটি দপ্তরে পদায়ন করা হয়। সর্বশেষ এই যুগ্ম কমিশনারকে যশোরে বদলি করা হলেও প্রভাবশালী এনবিআরের সদস্যের বদান্যতায় নানা অজুহাতে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে তাকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বহাল রাখা হয়েছে। এখনো চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে তার রিলিজ আদেশ দেওয়া হয়নি।

এদিকে, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করার পরও তা আদায় না করেই পণ্যের চালানটি ছেড়ে দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে গাজীপুরের বন্ডেড প্রতিষ্ঠান ইউনিক ডিজাইনার্সকে কমিশনার শফি উদ্দিন ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিচারাদেশ দেন। এতে আইন অনুযায়ী, শুল্ক-কর এবং জরিমানা মিলে পণ্য চালান খালাসের আগে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আদায় করার কথা। কিন্তু মাত্র ৪ হাজার ২২৪ টাকায় গত ১৩ আগস্ট পণ্যের চালানটি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে খালাস হয়। কাস্টম হাউস ও এনবিআরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন বিচারাদেশ করার পরও শুল্ক-কর ও জরিমানা ছাড়াই পণ্য চালানটি ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ কাস্টম আইনে জরিমানা করা হলে আমদানিকারককে পণ্যের চালানের বিপরীতে সব শুল্ক-কর ও জরিমানা পরিশোধ করার পরই তা খালাস করতে হবে, নতুবা কমিশনারের বিচারাদেশের বিপরীতে আপিল করে রায় পাওয়া সাপেক্ষে সে অনুযায়ী পণ্য খালাস করতে হবে। কিন্তু এই চালানের ক্ষেত্রে এই আইনি প্রক্রিয়া মানা হয়নি।

বিচারাদেশ জালিয়াতির বিষয়ে যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান এবং জরিমানা আদায় ছাড়াই পণ্য খালাসের বিষয়ে কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিনের বক্তব্য জানতে তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। পরে কালবেলার পরিচয় দিয়ে তাদের মোবাইলে খুতেবার্তা পাঠানো হলেও তাদের সাড়া মেলেনি। এ ছাড়া কয়েক দফায় এনবিআরের শুল্ক নীতির সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবিরের দপ্তরে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি দেখা করবেন না বলে তার দপ্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com