ভারতে শনাক্ত হওয়া তিনটি দূষিত কাশির সিরাপ সম্পর্কে স্বাস্থ্য পরামর্শমূলক সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সোমবার (১৩ অক্টোবর) এ সতর্কতা জারি করা হয়। পাশাপাশি সেই ওষুধ নিয়ে নতুন কোনো তথ্য প্রকাশ পেলে স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে প্রতিবেদন পাঠাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ওষুধগুলো হলো স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালের কোল্ডরিফ, রেডনেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের রেসপিফ্রেশ টিআর এবং শেপ ফার্মার তৈরি সিরাপ রিলাইফ। এই কফ সিরাপগুলো ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং বাজারে বিপুল পরিমাণে সরবরাহ করা হয়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, দূষিত সিরাপগুলো উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করে এবং গুরুতর, সম্ভাব্য জীবন-হুমকিস্বরূপ অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন ডব্লিউএইচওকে জানিয়েছে, সিরাপগুলো বিভিন্ন প্রদেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা খেয়েছিল বলে জানা গেছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা জেলায় মারা যাওয়া শিশুরা ওই সিরাপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই অসুস্থ হয়েছিল।
কাশির ওষুধে বিষাক্ত ডাইথিলিন গ্লাইকলের পরিমাণ অনুমোদিত সীমার প্রায় ৫০০ গুণ বেশি ছিল। তবে সেসব শুধু ভারতেই বিক্রি হতো। দূষিত কোনো ওষুধ ভারত থেকে রপ্তানি করা হয়নি এবং অবৈধ রপ্তানির কোনো প্রমাণ নেই।
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন শুক্রবার নিশ্চিত করেছে, এই বিষাক্ত কাশির সিরাপগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়নি। তবে তারা সতর্ক রয়েছেন।
ডব্লিউএইচওর সতর্কবার্তার আগেই ভারত অন্তত তিনটি রাজ্যে একটি কাশির সিরাপ বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিরাপটিতে বিষাক্ত পদার্থ ডাইথিলিন গ্লাইকোল (ডিইজি) পাওয়া গেছে, যা শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত এক ধরনের রাসায়নিক এবং অল্প পরিমাণেও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
এই সিরাপ সেবনের পর বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এএফপি জানায়, আগস্টের শেষ দিক থেকে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে পাঁচ বছরের কম বয়সী কমপক্ষে নয়টি শিশুর মৃত্যু এই সিরাপের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, পরীক্ষাগারে শিশুদের খাওয়া সিরাপের নমুনায় অনুমোদিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় ডিইজি পাওয়া গেছে।
ভারতে উৎপাদিত কাশির সিরাপ গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ২০২২ সালে ভারতের একটি কোম্পানির তৈরি সিরাপের সঙ্গে গাম্বিয়ায় ৭০ জনেরও বেশি শিশুর মৃত্যু যুক্ত ছিল, যা বিশ্বজুড়ে ভারতীয় ওষুধের মান নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।