মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিদেশি সাংবাদিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প এক অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের ওপর ক্ষিপ্ত হলে তার সহকর্মীরা বিষয়টিকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে নিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য ভিসা নীতি কঠোর করার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে হুঁশিয়ারি আসছে, যা বিদেশি সাংবাদিকদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে তার ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এতে ট্রাম্প খুবই বিরক্ত হন।
এই ঘটনা ওয়াশিংটনের সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদেশি সাংবাদিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ট্রাম্প শুধু বিদেশি সাংবাদিকদের প্রতিই বৈরী নন, তিনি দেশি-বিদেশি সব সাংবাদিকের ওপরই ক্ষিপ্ত।
তবে ওই সাংবাদিককে আরও বেশি ভাবাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ভিসা নীতি। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সাংবাদিকদের ৫ বছরের ভিসার মেয়াদ কমিয়ে ২৪০ দিন করা হচ্ছে। চীনা সাংবাদিকদের জন্য এই মেয়াদ মাত্র ৯০ দিন।
ওই সাংবাদিক বলেন, ‘মাত্র ২৪০ দিনের ভিসা নিয়ে আমি কীভাবে ফ্ল্যাট ভাড়া করব, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেব বা সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাব?’
তিনি আরও বলেন, একটি দেশে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। ‘এটা একটা দুঃস্বপ্নের মতো হতে চলেছে, তিনি বলেন।
আরেকজন ইউরোপীয় সাংবাদিক জানান, বিদেশি সাংবাদিকদের এই অনিশ্চয়তা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য না হলেও, এটি সার্বিক উদ্বেগের অংশ। তিনি আরও বলেন, হোয়াইট হাউস এমন সাংবাদিক পছন্দ করে, যারা তাদের মন মতো সংবাদ তৈরি করবে।
এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য এএফপি বেশ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলতে রাজি হন।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিজমের ক্যাথরিন জ্যাকবসেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আই-ভিসার মেয়াদ কমানোর ফলে এক ধরনের সেন্সরশিপ তৈরি হতে পারে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন সংবাদ তৈরির ক্ষেত্রে আনুগত্যের বিনিময়ে সাংবাদিককে কাজ করার সুযোগ দিতে পারে।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মাইক বালসামোও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, এমন পদক্ষেপের কারণে বিদেশে কর্মরত মার্কিন সাংবাদিকদের ওপরও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
এক্স-এ (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, মুক্ত সংবাদমাধ্যম শুধু আমেরিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এমন সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করে, যারা এখানে ভয় ছাড়া কাজ করতে পারে।’
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও জার্মানিতে সাবেক রাষ্ট্রদূত রিচার্ড গ্রেনেল সম্প্রতি জার্মান টেলিভিশন চ্যানেল জেডডিএফ-এর এক সাংবাদিকের ভিসা বাতিলের আহ্বান জানান।
গ্রেনেল এক্স-এ লিখেছেন, ‘এই কট্টর বামপন্থী জার্মান রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমতের মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিতে থাকে।’
হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলারের সঙ্গে ওই সাংবাদিকের একটি সাক্ষাৎকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। তার ভিসা বাতিল করা উচিত। আমেরিকায় এই ধরনের উসকানিমূলক ব্যক্তির কোনো জায়গা নেই।’
সম্প্রতি আমেরিকান রক্ষণশীল ব্যক্তিত্ব চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডের পর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিদেশিদের জন্য একটি কঠোর সতর্কবার্তা জারি করেন। যারা এই ঘটনাকে ‘প্রশংসা, যুক্তিসংগত বা হালকাভাবে’ দেখছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ এক্স-এ লিখেছেন, ‘বিদেশিদের এমন মন্তব্য আমার নজরে আনতে দ্বিধা করবেন না।’
তবে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসা সব বিদেশি সংবাদমাধ্যমের জন্য খারাপ খবর নয়। কিছু সংবাদমাধ্যম, যারা নিজ দেশে ট্রাম্পের মতো মতামত শেয়ার করে, তাদের হোয়াইট হাউস সাদরে গ্রহণ করেছে।
ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল জিবি নিউজ, যার তারকাদের মধ্যে একজন কট্টর ডানপন্থী নেতা নাইজেল ফারাজ, সম্প্রতি ওভাল অফিসে আমন্ত্রিত হয়। ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের সময় এই চ্যানেলের সাংবাদিককে প্রেসিডেন্টের প্লেনে একটি বিশেষ আসন দেওয়া হয়।
প্রেস বক্সে ট্রাম্পের উপস্থিতির সময় জিবি নিউজের সাংবাদিক বলেন, তার চ্যানেলের দর্শকেরা জানতে চেয়েছেন, ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের সঙ্গে ‘চাকরি বদল’ করতে চান কি না।