সোমবার, ০১:২৮ অপরাহ্ন, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

সেপ্টেম্বরে দ্বিগুণ রোগী ও মৃত্যুর ঝুঁকি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৩ বার পঠিত

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রায় সারা দেশেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত চলছে এখনো। এমন আবহাওয়ায় চলতি সেপ্টেম্বরকে ডেঙ্গু সংক্রমণের উচ্চঝুঁকির মাস হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে মোট শনাক্ত ডেঙ্গু রোগীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ছিল সেপ্টেম্বরে। আর ডেঙ্গুতে ওই বছরে মোট মৃত্যুর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ছিল একই মাসে। গত বছর সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছিল অক্টোবর থেকে নভেম্বরে। ডেঙ্গু শনাক্তের হার নভেম্বরে ছিল শীর্ষে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছে জুলাই ও আগস্টে। সেপ্টেম্বরেও একই ধারা শুরু হয়েছে। গত সাত দিনে প্রায় ৩ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যুও হয়েছে ১৩ জনের। পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে, চলতি সেপ্টেম্বর এবং আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসজুড়েও থাকবে ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণ। চলতি মাসে আগস্টের চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ রোগী ও মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর এখন সারা বছরের ভোগান্তির নাম। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সময় ধরা হয় জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরকে। এর মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় সেপ্টেম্বরে। এ মাসে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ও জমে থাকা পানি থেকে মশার বিস্তার রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষকে সংক্রমিত করে। এরপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। তবে গত বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও উচ্চঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। নিজের ও পারিবারিক সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে বাসাবাড়ির আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফেলে দিতে হবে তিন দিনের জমা পানি। ঘুমানোর সময় ব্যবহার করতে হবে মশারি। তবুও ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ডেঙ্গুর বিস্তার সেপ্টেম্বরে মারাত্মকভাবে বেড়ে চলছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশে সেপ্টেম্বরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। ফলে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। গত বছর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল। এ বছরও ডেঙ্গু সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী তিন মাস ডেঙ্গুর বিস্তার ভয়াবহ রূপ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই জরুরিভিত্তিতে মশক নিধন ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে।’

ডেঙ্গু সংক্রমণের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে এক বছরে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ২০২৩ সালে। ২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন, ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২, ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯, করোনাকালে ২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ এবং ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে হিসাবে এ বছর যত রোগী হাসপাতালে গেছে, বছরের হিসাবে তা পঞ্চম সর্বোচ্চ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৪১১ জন মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার মধ্যে অধিকাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও মৃত্যু হয় ১৩৫ জনের। মাসের হিসাবে চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) গত সাত দিনে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৩৫ জন। তার মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন। আগস্টে রোগী শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০ হাজার ৪৯৬ জন। মারা গেছে ৩৯ জন। জুলাইয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৪ জন। একই সময়ে মারা গেছে ৪১ জন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১৮ হাজার ৯৭ জন। এ সময়ে মারা যায় ৮০ জন। আগস্টে রোগী শনাক্ত হয় ৬৫২১ জন। এ সময় মারা যায় ২৭ জন। জুলাইয়ে রোগী ভর্তি হয় ২ হাজার ৬৬৯ জন। মারা যায় ১২ জন।

ডেঙ্গু সংক্রমণের সর্বশেষ চিত্র: গতকাল রোববার ডেঙ্গুতে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় সারা দেশে ৫৮০ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলো ১৩৫ জনের। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৪১১ জনে। গতকাল ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৮৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৮০ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩২ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৫ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) তিনজন, সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৭ জন রয়েছে। এ ছাড়া গতকাল ৫৫২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এ যাবত ৩২ হাজার ৭০৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। মোট শনাক্ত রোগীর মধ্যে ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, আগস্টে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৯৬ জন ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং মারা গেছে ৩৯ জন। এ বছরের জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬, এপ্রিলে ৭০১, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩, জুনে ৫ হাজার ৯৫১ এবং জুলাইয়ে ১০ হাজার ৬৮৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে সাত, মে মাসে তিন, জুনে ১৯ এবং জুলাইয়ে ৪১ জন মারা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com