জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে একই দিনে ভাষণ দেবেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।
আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে তিন নেতার ভাষণ দেওয়ার সূচি ইতোমধ্যেই প্রকাশ করেছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
সংবাদমাধ্যমটি উল্লেখ করেছে, গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চারদিনব্যাপী উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়াকে পারমাণবিক সংঘাতের ধারে নিয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পর এবার প্রথমবারের মতো ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী একই দিনে সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের বিতর্কে অংশ নেবেন।
২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণও দেওয়ার কথা রয়েছে। জাতিসংঘের প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ ভাষণ দেবেন, যা ইসলামাবাদের কাছে সরাসরি দিল্লির বক্তব্যের জবাব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।
দ্য ডন জানিয়েছে, শেহবাজ শরিফ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। তার দলে থাকবেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার ও প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক ফাতেমি।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ৯ সেপ্টেম্বর। তবে উচ্চপর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রথম দিনে ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র বক্তব্য রাখবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম ভাষণ দেবেন। এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য—‘একসাথে ভালো: শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পথে ৮০ বছর ও আরও বেশি।’
প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সকালে বক্তব্য রাখবেন। বিকেলে পাকিস্তান, ইসরায়েল, চীন ও বাংলাদেশের প্রধানরা বক্তব্য রাখবেন। দিল্লি ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি সাধারণ বিতর্কে অংশ নেবেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদি ও শেহবাজের একের পর এক বক্তব্য দুই দেশের অবস্থানের পার্থক্য স্পষ্ট করবে। ভারত তার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেবে, আর পাকিস্তান কাশ্মির ও আঞ্চলিক শান্তি বিষয়টি কেন্দ্রবিন্দুতে তুলবে। একজন জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেন, ‘বিশ্ব দেখেছে দক্ষিণ এশিয়া কত দ্রুত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। কাশ্মির সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান ছাড়া জাতিসংঘের শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি আমাদের অঞ্চলে কখনো পূর্ণ হবে না।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৮০তম অধিবেশন সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে ব্যস্ত কূটনৈতিক মৌসুম হবে। কারণ, গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ, ইউক্রেন সংঘাত ও গত মে মাসের ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাব এখনও বিদ্যমান। পাকিস্তানের বার্তা স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ার উত্তেজনা উপেক্ষা করা যাবে না, আর টেকসই শান্তির চাবিকাঠি হলো কাশ্মির।
প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী, ২৪ সেপ্টেম্বর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ অধিবেশন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ বিলুপ্তির আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।