বুধবার, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় ‘ফ্যাসিবাদী হাসিনার মুখাবয়ব’

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৩ বার পঠিত

বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা, আনন্দ শোভাযাত্রা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাঙালির পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে এটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন এই নামের মধ্যে সর্বজনীনতা নেই। তারা আরও বলছেন, শোভাযাত্রায় যেসব প্রতীক থাকে তাতে আপামর বাংলার মানুষের সংস্কৃতির পরিচয় থাকে না। সেখানে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিষয় গত ২০-৩০ বছরে একটু একটু করে প্রবেশ করানো হয়েছে। সেদিক থেকে এই শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন হওয়া জরুরি। পাশাপাশি এমন সব প্রতীকের ব্যবহার র‌্যালিতে হওয়া উচিত যা সর্বজনীন।

যে নামেই হোক আসছে পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় অন্যতম প্রতীক হবে ফ্যাসিবাদের। যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মুখাবয়বের দুপাশে থাকবে শিংয়ের মতো। জুলাই বিপ্লবের প্রতীক হিসাবে মুগ্ধর পানি লাগবে বোতলটি পাবে ১৫ ফিট উচ্চতার আদল। তার ভেতরে আরও অনেক পানির বোতল থাকবে শহিদদের স্মরণে।

জুলাই বিপ্লবের পর প্রথমবারের মতো পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হবে এবার।

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সাম্প্রতিক সময়ে ‘মঙ্গল’ শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন হতে পারে এমন ইঙ্গিত দেন। পরে ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে তিনি জানান, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন হচ্ছে না।

কিন্তু মঙ্গল শোভাযাত্রার নামের পরিবর্তন ও সর্বজনীন কোনো নাম দেওয়ার বিষয়ে কথা বলছেন অনেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আনন্দ শোভাযাত্রা বা বৈশাখী শোভাযাত্রা বলা ভালো। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সঠিক মনে হয় না। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটিকে সর্বজনীন করতে হলে নামটা অবশ্যই পরিবর্তন করা উচিত। একজন সাধারণ মানুষকে যদি বলা হয় আমি আনন্দ শোভাযাত্রায় বা বৈশাখী শোভাযাত্রায় যাচ্ছি তাহলে সেটি সহজেই বুঝবে। কিন্তু তাকে যদি বলা হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ যাচ্ছি তাহলে সেটি সেভাবে বুঝতে পারবে না। সহজবোধ্য হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় যেসব প্রতীক ব্যবহার করা হয় প্যাঁচা থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু সেগুলো আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ বা চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই রকম সাংঘর্ষিক বিষয় থেকে বেরিয়ে এসে সর্বজনীন কোনো প্রতীক ব্যবহার করলে হয়তো আপত্তি থাকত না। যেমন ফুল হতে পারে। মসজিদ বা মন্দির সব জায়গায় এর ব্যবহার আছে।

তিনি বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো বিষয়গুলো সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হয়েছে। এগুলোর বয়স ৩০-৪০ বছরের বেশি নয়। তরুণদের মোহগ্রস্ত করার জন্য এই উৎসবকে ব্যবহার করা হয়। যদিও বহুকাল আগ থেকেই বাংলা নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে। এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। গ্রাম বাংলা থেকে শহরে সেটি পালিত হতো অন্যমাত্রায়, অন্যভাবে। সেটি এখন বিলুপ্ত হয়ে এসব জায়গা দখল করেছে। এটি হচ্ছে ভারতীয় আধিপত্যবাদের চিহ্ন বা প্রতীকের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া। এটা করতে পারলেই তাদের কাজ অর্ধেক সফল হয়। মনের দিক থেকে আমরা সেরকম হয়ে পড়ি। আরেক দেশের মানুষকে যখন মনের দিক থেকে দুর্বল করা যায় বা বিভ্রান্ত করা যায় তখন তাকে অন্য কোনোভাবে সহজেই কাবু করা সম্ভব হয়। এগুলো হলো আধিপত্যবাদের দীর্ঘস্থায়ী এক ধরনের ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রে মেতে আছেন আমাদের দেশের কিছু আত্মবিনাশী, আত্মধ্বংসী বা দেশবিরোধী তথাকথিত বুদ্ধিজীবী।

বিশিষ্ট কবি মাহবুব হাসান বলেন, ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে ভারতীয় আধিপত্যবাদ। দেবীর সন্তুষ্টির জন্য মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্য লেখা হতো। মঙ্গলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মন্দির কালচার। কাজেই আনন্দ শোভাযাত্রায় ফিরে যাওয়াই হবে সর্বজনীনতার কাছে যাওয়া। শুধু বাঙালি নয় এবার সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশুদ্ধ বাংলাদেশি শোভাযাত্রায় রূপ দেওয়াই হবে বিচক্ষণতার পরিচায়ক।

এদিকে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামের পরিবর্তন হতে পারে কিনা জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল যুগান্তরকে বলেন, আলোচনা চলছে বিশ্লেষণ চলছে। পরিবর্তন হতে পারে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে কিভাবে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়েছে তার আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ নিয়ে আলোচনা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কমিটিগুলো কাজ করছে। পাঁচটি উপ-কমিটি হয়েছে। ৯টি ওয়ার্কিং কমিটি। খুব শিগগিরই আলোচনা করে বোঝা যাবে কোন দিকে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত আসবে।

এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান যুগান্তরকে বলেন, ধারাবাহিকভাবে যেটি চলে এসেছে সেটি থাকতে পারে। তবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় চাইলে বাঙালির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ঠিক রেখে নামের পরিবর্তন করতেও পারে।

এদিকে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় সরেজমিন দেখা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলমান আছে। নানা প্রতীক তৈরির কাজ চলছে। ভাস্কর্য বিভাগের প্রাক্তনী দীপক রঞ্জন সরকার বলেন, শিক্ষক-ছাত্র-প্রাক্তনী সবাই মিলে এবার কাজ করছেন। শোভাযাত্রার সামনে মূল বিষয় হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদী প্রতিকৃতি’। হাসিনার ফ্যাসিবাদী মুখাবয়ব থাকবে মিছিলের সামনে। থাকবে জাতীয় পশু বাঘ। আর মেলায় কাঠের যে বাঘ পাওয়া যায় লোকজ মোটিভের আদলে সে ধরনের একটি বাঘ থাকবে। থাকবে লোকজ মোটিভের কবুতর, পালকি।

জুলাই আন্দোলনের প্রতীক মুগ্ধর পানির বোতল থাকবে। রড দিয়ে ১৫ ফুটের এই পানির বোতল তৈরি হচ্ছে। বোতলটির ভেতরে আবার অনেক বোতল রাখা থাকবে। আন্দোলনের সময় যে প্রাণগুলো হারিয়ে গেছে, শহিদ হয়েছে খালি বোতলগুলো তাদের প্রতীক।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খুবই সংস্কৃতিবোধসম্পন্ন। তারা প্রকৃতি ও পাহাড়ের জীবনের আবহকে ধারণ করে। একত্রিত হয়ে যে আমরা বসবাস করি তা এবার প্রকাশ হবে আবার। তারা র‌্যালির সামনের দিকেই থাকবে। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের নানা বিষয় নিয়ে সামনে আসবে। তাদের সামনে রেখেই শোভাযাত্রা এগিয়ে যেতে পারে।

জানা গেছে, এবার শোভাযাত্রা চারুকলা, শাহবাগ, টিএসসি হয়ে শহিদ মিনারের দিকে যাবে। দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি হয়ে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে। কিংবা শাহবাগ দিয়ে বের হয়ে হাইকোর্ট হয়ে শিশু একাডেমি হয়ে দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমি হয়ে আবার চারুকলায় এসে শেষ হতে পারে। এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে শিগগিরই।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com