নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) পদে বদলি নিশ্চিত করতে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নানকে ‘তিরস্কার’ দণ্ড দিয়েছে সরকার। বর্তমানে তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি নরসিংদীর এসপি ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-১ শাখার জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে সম্প্রতি এ বিষয়ে জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনটি স্বাক্ষর করেন সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ নাসিমুল গনি।
বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনায় জানা যায়, ২০২৩ সালে নরসিংদীর পুলিশ সুপার পদে যোগদানের জন্য হান্নান ‘রবিউল মুন্সী’ নামে এক মধ্যস্থতাকারীর কাছে ৫০ লাখ টাকা পৌঁছে দেন। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের কারণে তখন তার পদায়ন সম্পন্ন হয়নি।
পরে সেই বছরের ৯ নভেম্বর তিনি নরসিংদীর এসপি হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এবং ডিবি ইনচার্জ এস এম কামরুজ্জামান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ঢাকায় যান এবং মণিপুরীপাড়ায় রবিউল মুন্সীর অফিসে গিয়ে ৫ লাখ টাকা ফেরত নেন। বাকি ৪৫ লাখ টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা হিসেবে তাদের সামনেই স্বহস্তে লেখা একটি দলিল গ্রহণ করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে, যুগান্তরের সাংবাদিক নেছারুল হক খোকনের সঙ্গে ফোনালাপে ওইসময়কার এসপি হান্নান বদলির টাকার লেনদেন এবং ব্যক্তিগত কাজে অধস্তন পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেন। পরে সেই অডিও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। হান্নান লিখিত জবাব দেন এবং ব্যক্তিগতভাবে শুনানির আবেদন করেন। গত ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত শুনানিতে উভয়পক্ষের বক্তব্যে, তদন্ত নথি ও অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ নিশ্চিত হয়।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা ও শুনানি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী তাকে লঘুদণ্ড হিসেবে ‘তিরস্কার’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।