বুধবার, ০৬:১৪ অপরাহ্ন, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ১২ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
মধ্যপ্রাচ্যে ১৭, বাংলাদেশ ১৮ ফেব্রুয়ারি রোজা শুরু হতে পারে ‘জুলাই সনদ ও সংস্কার হলে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এনসিপি’ ন্যায্য সমাধান করা হবে, আন্দোলনের প্রয়োজন নেই: ফাওজুল কবির আফগানিস্তানে যাত্রীবাহী বাস উল্টে নিহত কমপক্ষে ২৫ শেখ হাসিনাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান, ভূতের মুখে রাম নাম : অ্যাটর্নি জেনারেল ‘স্যার সময়মতো ক্লাসে আসেন না’ বলায় ৩৩ ছাত্রকে বেধড়ক পেটালেন শিক্ষক পলক-আনিসুল-সালমান-কামরুলসহ ৬ জন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার সীমানা পুনর্নির্ধারণে ইসিতে শেষ দিনের শুনানি চলছে ১৮ হলের ১৩ পদে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ অপকর্মের মাফিয়া ‘ব্যাডবয়’ আফ্রিদি

পরীক্ষাকেন্দ্র নির্ধারণে আসছে বড় সংস্কার

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

বাংলাদেশে পাবলিক পরীক্ষার ইতিহাস যত পুরনো, তার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাবের দখলদারিও ততটাই বিস্তৃত। বিশেষ করে গত পনেরো বছর একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ ছিল ক্ষমতার খেলায় ব্যবহৃত একটি কৌশল। পরীক্ষাকেন্দ্র বণ্টনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা, যোগাযোগব্যবস্থা বা অবকাঠামো বিবেচনার বদলে প্রাধান্য পেত রাজনৈতিক আনুকূল্য ও প্রভাবশালীদের চাপ। এর ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্নও তৈরি হয়। এ প্রেক্ষিতে পরীক্ষার কেন্দ্র পুনর্নির্ধারণে বিভিন্ন বিষয়ে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।

সম্প্রতি ঢাকা বোর্ডের অধিভুক্ত জেলাগুলোর প্রশাসককে পাঠানো একটি চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছেÑ রাজনৈতিক চাপ ও ক্ষমতাবান মহলের প্রভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হতো। অনেক জায়গায় যেখানে সত্যিই কেন্দ্র প্রয়োজন ছিল, সেখানে তা দেওয়া হয়নি। এর ফলেই তৈরি হয়েছে নানা ধরনের বৈষম্য।

সাবেক এক শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যখন কোনো রাজনৈতিক নেতা কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতেন, তখন প্রায় নিশ্চিতভাবেই সে প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র অনুমোদন পেত। এতে তার রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ত, আবার প্রতিষ্ঠানকেও আর্থিক সুবিধা এনে দিত। কেন্দ্র ফি, পরীক্ষক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ভাতার একটি বড় অংশ ওই প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগে পরিণত হতো।’

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এটি ছিল শিক্ষাকে সরাসরি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় জড়িয়ে দেওয়ার এক ধরনের অপকৌশল। যারা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে সুবিধা পেয়েছে, তারা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক প্রভাবও ভোগ করেছে। কিন্তু এর দায় নিতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় অতিরিক্ত কেন্দ্র স্থাপন শিক্ষার্থীদের জন্য শাস্তিস্বরূপ হয়েছে। কেন্দ্র নির্ধারণে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে অনেক পরীক্ষার্থীকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অন্যত্র পরীক্ষা দিতে হয়েছে, আবার কোথাও ভিড় জমে সুষ্ঠু পরীক্ষা নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

মানিকগঞ্জ কলেজের শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রয়োজন না থাকলেও একেক জেলায় একাধিক কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠু বণ্টন হয়নি। কেউ বাড়ির পাশেই পরীক্ষা দিয়েছে, আবার কেউ কয়েক কিলোমিটার হেঁটে বা নৌকায় যাতায়াত করে পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়েছে। এতে পরীক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক চাপ বেড়েছে।’

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সম্প্রতি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পুনর্নির্ধারণে জরুরি উদ্যোগ নিয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা, অবকাঠামো, নিরাপত্তা প্রাচীর, বিজ্ঞানাগার ও কম্পিউটার ল্যাবÑ এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসকদের পাঠানো ওই চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই ভেন্যু কেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হলেও সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজেদের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পারবে না। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে নতুন তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার জানান, ‘রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব ও নিরাপদ কেন্দ্র নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তথ্য যাচাই করে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’

পরীক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণœ হলে পুরো ব্যবস্থার ওপর আস্থা নষ্ট হয়। রাজনৈতিক প্রভাবে কেন্দ্র নির্ধারণ শুধু অনিয়মই নয়, শিক্ষায় বৈষম্য ও পক্ষপাত তৈরি করে বলে মনে করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে কেন্দ্র দিলে সেটা শিক্ষার্থীর ন্যায্য অধিকার ক্ষুণœ করে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হলে কেন্দ্র নির্ধারণ সম্পূর্ণভাবে শিক্ষা বোর্ড ও প্রশাসনের হাতে থাকতে হবে, কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রভাব থাকা চলবে না।’

সাবেক এক বোর্ড চেয়ারম্যান নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘কেন্দ্র নির্ধারণের মানদ- একটাই হওয়া উচিতÑ শিক্ষার্থীর সুবিধা ও নিরাপত্তা। এটি নিশ্চিত করতে হলে আইন করে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে।’

তবে কেন্দ্র পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে জানিয়ে সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, প্রথমত, দীর্ঘদিনের প্রথা ভাঙা সহজ নয়। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপ থাকবেই। দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন কেন্দ্র স্থাপন কঠিন হতে পারে। সমাধানের পথ হিসেবে তিনি জানান, ‘সরকার চাইলে বাজেট বাড়িয়ে প্রান্তিক এলাকায় উপযুক্ত ভবন নির্মাণ করতে পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে হবে। কেন্দ্রের সংখ্যা সীমিত রেখে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু বণ্টন করা সম্ভব।’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগ সঠিক পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও এটিকে জাতীয় পর্যায়ে আইনি সুরক্ষা দিতে হবে। তবেই হাওর, পাহাড় ও চরাঞ্চলের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রাজধানীর কেন্দ্রীয় এলাকার শিক্ষার্থীরাও সমানভাবে ন্যায্য সুযোগ পাবে। শিক্ষা যদি সত্যিই জাতীয় উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হয়, তবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র নিশ্চিত করাই হবে সবচেয়ে বড় সংস্কার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com