রবিবার, ০৮:০৪ অপরাহ্ন, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

গৌরনদীতে ভন্ড ও প্রতারক সাধুকে ধরে পুলিশে সোপর্দ

গৌরনদী প্রতিনিধি :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

বরিশালের গৌরনদীতে শুক্রবার রাতে সঞ্জিত মিত্র (৩৩) নামের এক ভন্ড ও প্রতারক সাধুকে ধরে উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে নিজ সম্প্রদায়ের ভূক্তভোগী বিক্ষুব্দ জনতা।
ঘটনার পর ভূক্তভোগী মানিক ভদ্রের মা, উপজেলার চাঁদশী গ্রামের নিত্যানন্দ ভদ্রের স্ত্রী কানন ভদ্র (৬৫) বাদি হয়ে ওই রাতে গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার সকালে তাকে বরিশাল আদলতে সোপর্দ করেছে।
গ্রেফতার হওয়া ভন্ড ও প্রতারক সাধু সঞ্জিত মিত্রের বাড়ি পার্শ্ববর্তি আগৈলঝাড়া উপজেলার রামানন্দের আক গ্রামে। সে ওই গ্রামের সুধির মিত্র ও রেখা রানী মিত্রের ছেলে।
মামলার এজাহার ও ভূক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, গত প্রায় তিন বছর পূর্বে ভন্ড সাধু সঞ্জিত মিত্র উপজেলার চাঁদশী গ্রামের বাসিন্ধা ও দক্ষিন নাঠৈ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিক ভদ্রের বাড়িতে আসে। এর পর নানা ছলাকলায় ওই ভন্ড সাধু প্রধান শিক্ষক মানিক ভদ্রকে তার শিষ্য বানায়। এরপর নানা মোহে আকৃষ্ট করে ভন্ড সাধু নিজে গোপনে মানিকের পান বরজের লতা কেটে ফেলে ধর্মের নানা বিধি বিধানের দোহাই দিয়ে ভয় দেখিয়ে মানিকের সংসারে নানা বিপর্যয় ঘটায়। এক পর্যায়ে সে ভন্ডামীর মাধ্যমে নিজেকে অলৌকিক শক্তিধর বলে প্রমান করতে গিয়ে মানিকের তিনমাস বয়সী একটি সুস্থ্য ছেলেকে মেরে ফেলে। এভাবে মানিকের সংসার জীবন তছনছ করে ফেলে। মানিকের সুন্দরী স্ত্রীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পরায় সে এ কাজ করে বলে দাবি স্থানীয়দের। ওই ভন্ড মানিকের স্ত্রী তিথি দাস (২৮) কে সরকারি চাকরি দেয়ার নাম করে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর মানিকের নামে ইসলাম বিদ্বেষী নানা লেখা লিখে বিভিন্ন স্কুলসহ নানা যায়গায় লাগিয়ে রেখে মানিকের বিরুদ্ধে এলাকার মুসলমানদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলে। ফলে স্ত্রী, পিতা-মাতাকে ফেলে মানিক দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই ভন্ড সাধু ঢাকা থেকে বিআরটিসি বাস যোগে এসে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে নামলে চাঁদশী এলাকার বাসিন্ধা বাচ্চু সরদার তাকে দেখে ফেলে। এ সময় সে তাকে দাড় করিয়ে রেখে ভূক্তভোগী মানিক ভদ্রের স্বজন, এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য অমলা রানীকে খবর দেয়। তারা এসে ভন্ড সাধুর উপর চড়াও হয়ে তাকে কিছু উত্তম মাধ্যম দেয়। এ সময় শতাধীক বিক্ষুব্দ জনতা সেখানে জড়ো হয়ে ভন্ড সাধুকে ছিনিয়ে নিয়ে মারধরের চেষ্টা চালায়। তখন স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে একটি দোকানের ভেতরে নিরাপদে রাখেন ও থানা পুলিশকে খবর দেন। গৌরনদী মডেল থানার ওসিসহ পুলিশের একটি টীম রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে সাধুকে উদ্ধার করে খানায় নিয়ে যায়। এরপর ভূক্তভোগী মানিক ভদ্রের মা কানন ভদ্র (৬৫) বাদি হয়ে ভন্ড সাধু সঞ্জিত মিত্রের বিরুদ্ধে ওই রাতে গৌরনদী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
ভারতে পালিয়ে থাকা ভূক্তভোগী মানিক ভদ্রের চাচাতো ভাই গৌরনদী উপজেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার মাঠ সমন্বয়ক সঞ্জয় ভদ্র অভিযোগ করে বলেন, ধর্ম প্রচারের নামে ওই ভন্ড সাধু আমার চাচাতো ভাই মানিককে নিয়ে বিভিন্ন ধর্ম সভায় যেত। মানিকের ২৫০ থেকে ৩০০ পান বরজ ছিল। ভন্ড সাধু মোট সে ৮বার ওই পান বড়জের লতাগুলো কেটে ফেলে। যা মানিক ওই সময় ধরতে পারেনি। মানিককে সংসারটিকে সে ধংস করে ফেলেছে। ভন্ডসাধু নিজে ইসলাম বিদ্বেষী লেখা লিখে মানিকের নামে প্রচার করে তাকে দেশ ছাড়া করেছে। আমরা ওর কঠিন বিচার চাই।
ভূক্তভোগীদের অভিযোগ অস্বীকার করে ভন্ড সাধু সঞ্জিত মিত্র বলেন, আমি ধর্ম প্রচার করতে মানিক ভদ্রের বাড়িতে যেতাম। সেও আমার বাড়িতে যেতো। এর বাইরে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিলনা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, বাদির এজাহারের ভিত্তিতে পুলিশ সাধুকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com