সোমবার, ০৯:২৩ অপরাহ্ন, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ইসির মুখে কুলুপ, ভোট নিয়ে ধূম্রজাল

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
  • ৮ বার পঠিত

লন্ডনে গত ১৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেলেও এ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার বা যে সংস্থা নির্বাচন পরিচালনা করবে সেই নির্বাচন কমিশন এ পর্যন্ত কোনো কিছুই খোলাসা করেনি। বিশেষ করে, গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) মধ্যে একান্ত বৈঠকের পর কোনো পক্ষই নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে মুখ না খোলায় এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিশ্লেষকরাও তা-ই মনে করছেন।

সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন গতকাল রবিবার পর্যন্ত বৈঠকের বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি। কিছু বলা হয়নি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও। তাই সেদিনের বৈঠকে ঠিক কি আলোচনা হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার না। গতকাল রবিবার প্রথম কর্মদিবসের সকাল থেকেই গণমাধ্যমকর্মীরা সিইসির অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু এদিন তিনি অফিসে আসেননি। আগে থেকেই ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিল এনসিপি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এর প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সিইসিকে ইসি পুনর্গঠনের বার্তা দেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই বার্তা পেয়ে সিইসি আর অফিস করেননি- এমন গুঞ্জন ছিল গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে। তবে ইসি সচিব গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি (সিইসি) চিকিৎসাধীন। আজ সোমবারও সিইসি অফিস করবেন না বলে গুঞ্জন ছিল গতকাল।

এদিকে ইসলামি দলগুলোর গত শুক্রবারের সমাবেশ থেকে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে ভোটের দাবি তোলায় নতুন করে জটিলতা দেখছেন রাজনীতিবিদরা।

রাজনীতির মাঠে এখনও ঘুরেফিরে একটা কথাই এখন আলোচনায়- কবে নাগাদ ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে? ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজনীতির মাঠের অন্যতম বড় দল বিএনপির নেতারাও ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক হওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উৎফুল্ল ভাব দেখা দিয়েছিল, ধীরে ধীরে তা ম্লান হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকে। সর্বশেষ ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির বৈঠকের পর এ পর্যন্ত কোনো পক্ষই সেই বৈঠকের বিষয়ে কিছু না বলায় হতাশা আরও বেড়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।

এদিকে নির্বাচন নিয়ে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে ভোটের দাবি ওঠার পর। এ ছাড়া জামায়াত-এনসিপিসহ কয়েকটি দল শুরু থেকেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করে আসছিল। তাই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে আদৌ ভোট হবে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, লন্ডন বৈঠকের পর সরকার ও ইসির গতিবিধি নিয়ে জাতি হতাশ। অন্তর্বর্তী সরকার এতদিন ধরে বলে আসছে, জুলাই চার্টারের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হবে। সেই জুলাই চার্টার নিয়েও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সব মিলিয়ে নির্বাচন ঝুলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক দুই সিইসিকে গ্রেপ্তার ও অপদস্থ করায় বর্তমান কমিশনের ওপর মানসিক চাপ বেড়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আগের কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা হয়েছে বা অপদস্ত হতে হয়েছে, তাতে বর্তমানে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা না পেলে কেন ভোটের তারিখ দেবেন? ভোটে অনিয়ম ঠেকানো সিইসির একার কাজ নয়। কিন্তু পুরো দায় যদি সিইসি বা কমিশনারদের ওপর বর্তায়, তাহলে তারা কেন ঝুঁকি নিতে যাবেন?

জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে যখন জোরালো দাবি তোলা হচ্ছিল ঠিক সে সময় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ কিছু বিষয় নতুন করে সামনে আনার চেষ্টা জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার উপাদান বলে মনে করছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

অনেকেই বলছেন, দলের প্রতীক ও ব্যানারে যেসব দলের প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়া নিয়ে ভীষণ শঙ্কা রয়েছে, তারাই নতুন তত্ত্ব হাজির করেছেন। এ ছাড়া দেশের ১৮ কোটি ভোটারের কাছেই যেখানে পিআর পদ্ধতি অপরিচিত, সেখানে হঠাৎ এ নিয়ে আলোচনা তোলার অর্থই রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি করে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি, বড়জোর এপ্রিলকে নির্বাচনের মাস ধরে নিয়ে নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভোটানুষ্ঠানের সময়কাল নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখছেন কি না? এমন প্রশ্নে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, সেটা আমরা ১০০ বছর ধরে বুঝে আসছি। পিআর পদ্ধতিটা কি সাধারণ মানুষ বুঝবে? এখানে ভোটার যে প্রার্থীকে ভোট দেবে সেই প্রার্থী সংসদে নাও যেতে পারে। তাই ভোটার কেন তাকে ভোট দিতে যাবে?

জুলাই সনদের অনিশ্চয়তা প্রসঙ্গে দেশবরেণ্য এই আইনজীবী বলেন, এটা কী আইন? আইন হলে মানুষ মানতে বাধ্য। কিন্তু এটা তো আইন না। একটা ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। কেউ যদি সেই ঘোষণা না মানেন, তাহলে তো কিছু করতে পারবেন না। কারণ এটার আইনগত ভিত্তি নেই। মানার বাধ্যবাধকতাও নেই।

ভোটের অনিশ্চয়তা প্রসঙ্গে শাহদীন মালিক বলেন, সুষ্ঠু ভোট না হওয়ার মতো পরিস্থিতি যদি দেখা যায়, তাহলে নির্বাচন কমিশন ভোট করবে? যেভাবে মামলা হয়েছে তাতে করে এখন যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা তো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন। এ অবস্থায় কে চাইবে জেলে যেতে?

তবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভোটানুষ্ঠানের বিষয়ে আশাবাদী রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, আমরা ধরে রাখতে পারি, কোনো বড় রকমের দুর্ঘটনা না হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। যেহেতু এটার কমিটমেন্ট হয়ে গেছে। বড় রকমের দুর্যোগ না হলে আমি এতে সমস্যা দেখি না। সে ক্ষেত্রে দলকে দৃশ্যমান রাখার জন্য এবং সরকারকে চাপে রাখার জন্য বিএনপির নেততারা অনেক কথাই বলবেন। এগুলো এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশল।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com