শীতের ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে পরিবার-পরিজন নিয়ে লাখো মানুষ ছুটেছেন সমুদ্রসৈকতের টানে। কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের সব কক্ষ এরই মধ্যে বুকিং হয়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমুদ্রপ্রেমীদের এই ঢল অব্যাহত থাকবে মার্চ মাস পর্যন্ত।
মঙ্গলবার সৈকতের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা গেছে কেবল মানুষ আর মানুষ। বিশেষ করে সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলি ও লাবণী পয়েন্টে লাখো মানুষের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে কক্সবাজারে কয়েক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটেছে।
মঙ্গলবার বিকালে ইনানী ও অন্য পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, কুয়াশার মাঝেও বেলাভূমিতে অসংখ্য মানুষের পদচারণা। শীত উপেক্ষা করে নোনা জলে গা ভিজাচ্ছেন অনেকে। কেউ জেট স্কি নিয়ে ঢেউ মাড়াচ্ছেন। ঘোড়ার পিঠে বেলাভূমির এদিক-সেদিক ঘুরছেন কেউ কেউ। বিচ বাইকে চক্কর মারছেন অনেকে। উপস্থিত পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। আর গোসলে নেমে কেউ যেন বিপদে না পড়েন, সেই তৎপরতা চালাচ্ছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, হোটেল-মোটেল জোনে তারকা মানের হোটেলসহ নানা ক্যাটাগরির ৫ শতাধিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে দৈনিক এক লাখ ৩০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে গড়ে লাখখানেক পর্যটক অবস্থান করছেন। ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর পর্যটন স্পট, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ, নেচার পার্ক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধবিহারসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলো পর্যটকে সরগরম।
পর্যটন উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। তবে, কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট থেকে একাধিক জাহাজে দৈনিক দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাচ্ছেন। জাহাজের টিকিট নিশ্চিত করলেই অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন করে ভ্রমণ পাশ মিলছে।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের ম্যানেজার (ফ্রন্ট অফিস) আবদুল হান্নান বলেন, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে রুমের চাহিদা বেড়েছে। আমাদের অনেক পর্যটক আগাম বুকিং দিয়েই এসেছেন। তাই, এখন এসে রুম চাইলে দুঃখপ্রকাশ ছাড়া কিছুই করার থাকছে না।
তারকা হোটেল কক্স-টু ডে-র সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, হোটেল কক্ষ খালি যাচ্ছে না। এ অবস্থা আরও সপ্তাহ-দশ দিন থাকবে। একই অবস্থা লাবণী পয়েন্টের হোটেল মিশুক, মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল কল্লোল, অভিসার, তারকা হোটেল সি গাল, সুগন্ধা পয়েন্টের লেগুনা বিচ, সি-নাইট, অস্টার ইকো, ইউনি রিসোর্ট, ডায়মন্ড প্যালেস, ইকরা বিচ রিসোর্ট, কলাতলীর সায়মন বিচ রিসোর্টসহ পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউজ-রিসোর্ট ও কটেজের।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, লাখো পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ৮৫ জন সদস্যকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবার সতর্কতার কারণে এখনো পর্যন্ত কোনো হয়রানি বা দুর্ঘটনার খবর আসেনি।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও ট্রাফিক পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকবাহী কয়েক হাজার যানবাহন (বাস, মাইক্রো, কার-জিপ) শহরে অবস্থান করায় কলাতলী ডলফিন মোড়, বাইপাস সড়ক, প্রধান সড়কের বাজারঘাটাতে যানজট হচ্ছে। যানজট নিরসনে কাজ করছে অর্ধশতাধিক পুলিশ।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া কিংবা খাবারের মূল্য আদায়ের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয় তদারকি করতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।