– তিন স্তরের দুই হাজার কর্মকর্তা বঞ্চিত
– দেড় যুগ ধরে একই পদে চাকরি
দীর্ঘ দেড় যুগ পর এবার শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন পদে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জট খুলছে। দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতির কারণে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্ন মতাদর্শের কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন তাদের ন্যায্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রেখেছিল। গত ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন ধরে আটকে থাকা শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন পদে এবার পদোন্নতির ঘোষণা আসছে। তিন ক্যাটাগরিতে পদোন্নতি পাবেন তারা। দীর্ঘ দিন ধরে এই কর্মকর্তারা একই পদে চাকরি করে আসছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিগগিরই অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক এই তিন ক্যাটাগরিতে বড় ধরনের পদোন্নতির কাজ শুরু হচ্ছে। প্রথম ধাপে সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক, এরপর সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপক, সর্বশেষ প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। ইতোমধ্যে তালিকা করে কাজও শুরু করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে পদোন্নতি দেয়ার কাজের অংশ হিসেবে গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অধ্যাপক পদোন্নতির জন্য বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিপিসির পরবর্তী সভা আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বুধবারের বৈঠকে ১৬ থেকে ২২তম বিসিএস পর্যন্ত সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য এক হাজার ৬০ জনের বিপরীতে ১ হাজার ৯৪৯ জনের তালিকা উপস্থাপন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। তালিকায় ২০২৫ সালে অবসরে যাবেন এমন কর্মকর্তাদের নাম সংযুক্ত করে এ তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় দেশের বিভিন্ন কলেজে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রশাসনিক পদ ধরা হয়েছে। তবে কতজনকে শেষ পর্যন্ত পদোন্নতি দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
শিক্ষা প্রশাসনে পদোন্নতি বা নতুন করে পদায়নের বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: মাঈন উদ্দিন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বিগত সরকারের সময় শিক্ষা প্রশাসন, সরকারি কলেজসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহে পদোন্নতি বা পদায়নের ক্ষেত্রে বদলি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করা হয়। কেবল রাজনৈতিক বিবেচনা ও বদলি বানিজ্যের সিন্ডিকেট করে শতশত মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তাকে উপযুক্ত পদায়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থানকারী, দুর্নীতিবাজ ও বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের এখনো পদোন্নতি দিয়ে বিভিন্ন সুবিধাজনক স্থানে বা পদে পদায়ন নিতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ রকম হলে শিক্ষা ক্যাডারে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পাবে এবং বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করবে। তিনি আরো বলেন, দেড় যুগ পরে হলেও এখন যদি পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে আমাদের দাবি থাকবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই যেন বঞ্চিত দেখে যোগ্যতার ভিত্তিতে যেন এই পদোন্নতি দেয়া হয়। পদোন্নতির জোয়ারে যেন ঘুরে ফিরে সেই আগের সুবিধাভোগীরাই রাজনীতির ভোল পাল্টে আবারো সুবিধা নিতে না পারে।
এ দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ অধিদফতরের কলেজ শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষা ক্যাডারের নিয়োগ হয় বিষয়ভিত্তিক। পদোন্নতিও দেয়া হয় বিষয়ভিত্তিক। এবারো সেইভাবে পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মাউশি থেকে পদোন্নতিযোগ্য অধ্যাপক কর্মকর্তাদের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী বুধবারের সভায় সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার ফের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পদোন্নতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। উল্লেখ্য, এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালে মার্চ মাসে ৬৮৬ জনকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল।
সূত্র আরো জানায় ১৬তম থেকে ২২তম বিসিএস পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপক সবাইকে পদোন্নতির প্রস্তাব করেছে মাউশি। অবশ্য ২২তম ব্যাচ পর্যন্ত সবাইকে পদোন্নতি দেয়া হলেও সরকারকে অতিরিক্ত কোনো অর্থ গুনতে হবে না। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পেয়ে বর্তমানে পঞ্চম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন তারা। এই সংখ্যা প্রায় দুই হাজারের মতো।
কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেও বছরের পর বছর পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা। এর মধ্যে কোনো কোনো ব্যাচের কর্মকর্তারা দেড় যুগ ধরে একই পদে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত থাকায় শিক্ষা ক্যাডারের মূল পদ সরকারি কলেজের শিক্ষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সামাজিকভাবেও বিব্রত হচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, অন্য ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেয়া হলেও শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি দেয়া হয়।