শুক্রবার, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

কলাপাড়ায় রাস্তার ‘পুকুরে’ নাকাল সবাই

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪
  • ১৭ বার পঠিত

কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়ক যেন এক মরণফাঁদ। এই সড়কের পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে ১০-১৫ ফুট গর্তের। যাকে এলাকাবাসী ‘পুকুর’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এ গর্তে প্রতিদিনই কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটক, যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ছে।

দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর এ সড়ক সংস্কার না হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়ছেন সড়কের দুই পাশের শত শত ব্যবসায়ী ও পথচারীরাও। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, শিগরগরিই এ সড়ক সংস্কার শুরু হবে।

দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগের সাথে কুয়াকাটায় সড়ক যোগাযোগ সহজ হওয়ায় সারা বছরই সৈকতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু সড়কের দুরাবস্থার কারনে এখন পর্যটক কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। পর্যটন ব্যবসায়ীরাও পড়ছেন বিপাকে।

গত এক বছরে এ সড়কে দুর্ঘটনায় একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যানবাহন উল্টে গত ছয় মাসে আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ জন।

একটু বৃষ্টি হলেই এ সড়কের গর্তে পানি জমে ‘পুকুর’ সৃষ্টি হয়। আটকা পড়ে যানবাহন। দীর্ঘক্ষণ যান আটকে থাকায় এ সড়কে প্রতিদিনই যানজট থাকে। মাঝে মাঝে এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে যন্ত্রের সাহায্যে সড়কের পানি সেচে যান চলাচলের ব্যবস্থা করলেও সরকারিভাবে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পথচারী ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ সড়ক পথে প্রতিদিন তারা স্কুল কলেজে যাতায়াত করেন। কিন্তু রাস্তায় হাঁটু সমান কাদা পানি। সর্বত্র গর্ত। এতে পড়ে তারা আহত হচ্ছেন।

সড়কে পর্যটক ও যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি বাস,ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের ক্ষতির বিষয়ে পরিবহনের চালকরা বলেন, কলাপাড়া-কুয়াকাটা মাত্র ২২ কিলোমিটার সড়ক। অথচ এ সড়ক পার হতে তাদের এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। যাত্রীরা যেমন আহত হচ্ছে, তেমনি তাদের মালমালও নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সড়কের কারণে তাদের বেচাকেনা কমে গেছে। অথচ কলাপাড়ার সবচেয়ে বড় সবজি বাজার পাখিমারা। এ সড়কের কারনে মালামাল পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। সঠিক সময়ে পণ্য গন্তব্যে না পাঠাতে পারায় তারা এখন লোকসানে পড়ছেন।

পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ অফিসের তথ্য বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কলাপাড়ার পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর মৎস্য বন্দরের শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১১ কি. মি. অংশের সড়কের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে খুলনার দ্য রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ছিলো ২০ কোটি টাকা। কাজটি মানসম্মত না হওয়ায় তখন ঠিকাদারের বিল আটকে দেয় পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুটি দল সরেজমিন তদন্তও করেন।

তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকেও কাজের গুণগত মান ভালো হয়নি বলে প্রতিবেদন দেয়া হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে তখন সড়ক ও জনপথ বিভাগ আট কোটি টাকার বিল আটকে দেয়। তবে এ কাজ বাবদ ১২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম চুড়ান্ত বিল দাবি করে ২০১৪ সালে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলার কারণে ১১ কি. মি. সড়কের ওপর সংস্কার কাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। এ থেকেই বন্ধ ছিলো সড়কের সকল উন্নয়ন কাজ।

পাখিমারা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বাজারে ছয়শ ব্যবসায়ী। সবচেয়ে বড় কথা দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় এ সড়ক পথে যেতে হয়। তারা এ সড়ক সংসারের জন্য বারবার আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করছে না। তাই এক দশক ধরে তারা এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ বলেন, সড়কের কাজ নিয়ে এতোদিন মামলা চলায় তারা উন্নয়ন কাজ করতে পারেন নি। খুব শিগরিগরই এ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com