বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে তার ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ আর্থিক লেনদেনকারী মোট ৩৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দ থাকবে। গোপালগঞ্জে তার ৮৩টি দলিলের সম্পদ জব্দেরও আদেশ দেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম।
খুরশিদ আলম জানান, আদালতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আইন-কানুন দেখে নথি দেখে জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন।
তার সমগ্র সম্পদ জব্দের আওতায় আসছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, মামলাটি এখন অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। অনুসন্ধান পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে বলা যাবে না সব সম্পত্তি এর মধ্যে রয়েছে কি না।
‘মোট ৮৩ টি দলিলের প্রোপার্টি, বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে এই তালিকায়। কক্সবাজারের একটি প্রোপার্টি রয়েছে।’
এটিকে বিশেষ কোনো অগ্রগতি হিসেবে না দেখে তদন্ত কাজের একটা অংশ হিসেবে দেখতেই আগ্রহী খুরশিদ আলম।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে।
বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকায় এ সম্পর্কে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় গত মাসে বেনজীর আহমেদের সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে দুদকের তিন সদস্যের একটি কমিটি।
সাবেক আইজিপি দুর্নীতি নিয়ে স্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় করা প্রথম প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ।’
প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের নানা অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছিল।
এর মধ্যে রয়েছে, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই রিসোর্টে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় অন্তত ১৫ হাজার টাকা।
পুলিশের সাবেক এই প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তা, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের নামে অন্তত ছয়টি কম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা পাওয়া গেছে।
এছাড়া ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে রয়েছে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে লক্ষাধিক শেয়ার রয়েছে বলেও ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানে রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। এ ছাড়া পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।
অথচ, ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর ৭ মাস চাকরি করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে, যা তার আয়ের তুলনায় অসম।
বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে তার আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পত্তিগুলো অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেও চিঠিতে জানান ব্যারিস্টার সুমন। এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ সংগ্রহের জন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদককে অনুরোধ করেন তিনি।
পরবর্তীতে বেনজীর আহমেদ তার ফেসবুক পাতায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেন।
চাকরিজীবন থেকেই আহমেদ নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত।
২০২১ সালে র্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
যার অন্যতম বাহিনীটির সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
তখন মার্কিন বিবৃতিতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লংঘনে জড়িত থাকার জন্য বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।