বাজার দর
– কোনো সুখবর নেই পেঁয়াজের বাজারে
– মুরগি ও ডিমের দামে মাথাচাড়া
বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। তারপরও সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দাম। একটাকা দর কমলে তো বাড়ছে ১০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার এখন নিয়ন্ত্রণহীন পাগলা ঘোড়া। অতিষ্ঠ দেশের সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো। আয়ের সাথে ব্যয়ের ফারাক আকাশ-পাতাল। কোনো ভাবেই মেলাতে পারছে না আয়-ব্যয়ের হিসাব। হিমশিম খাচ্ছে। জিম্মি এই বাজারের কাছে সাধারণ ভোক্তারা। মূল্যবৃদ্ধির এই জালে অনেক পরিবার সুষম ও পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ কমিয়ে এনেছেন। খরচ বাঁচাতে নিয়েছেন নানা কৌশল। ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দামও বেড়েছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠলেও কমছে না দামের ঝাঁঝ। আলুর দাম পুরোনোটা বাজার ভেদে ৩০-৪০ টাকা এবং নতুন সাদা আলু ৬০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারগুলোর এই চিত্র।
রাষ্ট্রীয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদন বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম ব্রয়লার মুরগির ৬.০৬ শতাংশ, লবণ ১.৬২ শতাংশ, আদা ২.২২ শতাংশ, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩৩.৩৩ শতাংশ, রসুন ৬.৯৮ শতাংশ, সয়াবিন তেল বিভিন্ন ভেদে গড়ে ৩.২৩ শতাংশ, ডিম ৬.০২ শতাংশ এবং আলু ২১.০৫ শতাংশ বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকার মতো। গত সপ্তাহে শীতের সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন সে তুলনায় ১০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সারা বছরের সবজি দেশে উৎপাদিত উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহের গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। আগের সপ্তাহে এ বেগুনের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেশি চড়েছে লাউয়ের দাম। প্রতিটি কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে কেনা গেছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়ে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। এখনো কোনো সুখবর নেই পেঁয়াজের দামে। বরং দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। ক্রেতাদের ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আর দেশী পুরনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার ওপরে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কিছুদিন আগেও ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৭৫ টাকা, যা এখন ১৯০ টাকায় ঠেকেছে। একইভাবে বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম। আগে এ জাতের মুরগির কেজি পাওয়া যেত ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ছিল ১৩০ টাকার ডজন। যা এখন ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। এদিকে রাজধানীতে প্রতি কেজি গোশত ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করেও কোথাও কোথাও ব্যবসায়ীদের ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে খুব বেশি হেরফের হয়নি মাছের দাম। এখনো চিনির সঙ্কট কাটেনি মুদি বাজারে। প্রতি কেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে তেল, আটা, ময়দার দাম।
রাষ্ট্রীয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরে দেখা গেছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে অনেক পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। খোলা আটা ও ময়দা এবং সব ধরনের খাবার তেলের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে। বেড়েছে মসল্লার মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, লবণ। টিসিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটা (প্যাকেট), ময়দা (খোলা), সয়াবিন তেল (বোতল), মুগ ডাল (মানভেদে), অ্যাংকর ডাল, পেঁয়াজ (দেশী), পেঁয়াজ (আমদানি), রসুন (দেশী), রসুন (আমদানি) মানভেদে, ধনে, রুই, মুরগি (ব্রয়লার), খেজুর (সাধারণ মান), ডিম (ফার্ম), এমএস রড (৬০ গ্রেড), এমএস রড (৪০ গ্রেড), শসা, আলু, কাঁচামরিচ, লম্বা বেগুনের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চাল-মাঝারি(পাইজাম/লতা), চাল মোটা (স্বর্ণা/চায়না/ইরি), ডাল (নেপালি), ডাল (দেশী), শুকনা মরিচ (দেশী), শুকনা মরিচ (আমদানি), আদা (আমদানি), জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ইলিশ, গরু, খাসি, মুরগি (দেশী), ডানো, ডিপ্লোমা (নিউজিল্যান্ড), ফ্রেশ, মার্কস, চিনির মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে আলুর দাম বেশি হওয়ার কারণে অন্যান্য সবজির ওপরে কিছুটা চাপ পড়েছে। এখনো নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। অন্যান্য বছর এমন ভরা মৌসুমে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে নেমে আসে। এ কারণে মানুষ আলু কিনছে কম, অন্যান্য সবজির দিকে ঝুঁকছে। আবার কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়ার কারণ হিসেবে অবরোধে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন।