রবিবার, ১১:৫৩ অপরাহ্ন, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মতো বেআইনি পদক্ষেপের বিরোধী রাশিয়া : রাষ্ট্রদূত

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৪৪ বার পঠিত

বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মানতিতস্কি বলেছেন, আমেরিকা বা অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে নেয়া নিষেধাজ্ঞা বা অনুরূপ যেকোনো ‘বেআইনি’ পদক্ষেপের বিরোধী তারা।

তিনি বলেন, ‘আমরা এধরনের যেকোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরোধী। আমরা এখানে (বাংলাদেশে) যেকোনো নিষেধাজ্ঞা বা অনুরূপ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে থাকব। দেখা যাক কী হয়।’

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘টকস উইথ অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলা ট্রিবিউনের কূটনৈতিক প্রতিবেদক শেখ শাহরিয়ার জামান।

এখানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মতো কিছুই ঘটবে না বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জিজ্ঞাসা করছেন রাশিয়া কী করবে, কিন্তু আমরা এখনো জানি না এখানে কী ঘটতে যাচ্ছে।’

রাষ্ট্রদূত মানতিতস্কি বলেছেন, রাশিয়া পশ্চিমের একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে স্বীকৃতি দেয় না। ‘আমরা শুধুমাত্র নিরাপত্তা পরিষদের দেয়া নিষেধাজ্ঞা স্বীকার করি।’

তিনি বলেন, এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে বাংলাদেশকে কী ধরনের সহায়তা দেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে।

আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত ইতিবাচক জবাব দেন।

তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার কথা উল্লেখ করেন।

গত ২২ নভেম্বর এক সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মারিয়া জাখারোভা বলেছিলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার অজুহাতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের প্রচেষ্টার বিষয়ে বারবার কথা বলেছে রাশিয়া।

জাখারোভার আরো উদ্ধৃতি দিয়ে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জাতীয় আইনের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে, বিদেশী শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাহায্য ছাড়াই আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।’

২০২২ সালে বাংলাদেশে রাশিয়ান মহাকাশ শিল্পের পণ্য ও পরিষেবার প্রচারের ক্ষেত্রে সহযোগিতার একটি স্মারক সই করেছে রাশিয়ান জেএসসি ‘গ্লাভসকমস’ এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড।

যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু-২ পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট সিস্টেমের উৎপাদন ও উৎক্ষেপণের বিষয়গুলো রয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রকল্পের প্রযুক্তিগত পরিমিতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য বাণিজ্যিক প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।’

তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশ সরকারের উপর নির্ভর করছে, এখন তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব।

২০২৩ সালের নভেম্বরের শুরুতে রাশিয়ান প্রশান্ত মহাসাগরীয় বহরের একটি বিচ্ছিন্ন যুদ্ধজাহাজ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌ অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে শুভেচ্ছা ভ্রমণ করেছিল।

বিষয়টি নিয়ে কোনো গোপন বার্তা আছে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ভ্রমণ।

রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আপনারা এটিকে কীভাবে দেখবেন তা আপনাদের উপর নির্ভর করে, তবে এটি একটি শুভেচ্ছা সফর ছিল।’

অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।

তিনি বলেন, এমনকি কোভিড-১৯ মহামারীও একে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। ২০২১ সালে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ২৯৭ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড গড়েছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০২২ সালে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘বেআইনি’ একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ‘পরে উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশসহ বিদেশী অংশীদারদের সাথে রাশিয়ার বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে বাণিজ্য লেনদেন ৬৪০ মিলিয়ন ডলার কমে গেছে।’

তিনি বলেন, রুশ কোম্পানিগুলো জিটুজি ভিত্তিতে ১ মিলিয়ন টন শস্যের পাশাপাশি প্রতি বছর ৫ লাখ টন পটাশিয়াম ক্লোরাইড সরবরাহ করতে প্রস্তুত।

রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সম্পৃক্ততা শুধু নির্মাণকাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; আমরা পারমাণবিক প্রকল্পের পুরো জীবনচক্র জুড়ে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সহায়তা করব। যার মধ্যে চুল্লির জ্বালানির দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ, উদ্ভিদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাশিয়া বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক সেক্টর তৈরি করতে সহায়তা করছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার পূর্ণ সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। ‘এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে, ২০২২ থেকে অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড রাশিয়া ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই রাশিয়ান ব্যবসায়ীরা নতুন সরবরাহকারীদের দিকে মনোযোগী হচ্ছে, এর মধ্যে বাংলাদেশের সরবরাহকারীরাও রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিনিয়োগেই বিলিয়ন ডলার আয় হতে পারে।’

তিনি বলেন, রাশিয়ার কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, মহাকাশ ও ভূতাত্ত্বিক গবেষণা, মেরিটাইম, রেলওয়ে ও বিমান পরিবহনের মতো খাতে বিভিন্ন যৌথ প্রকল্পে অংশ নিতে প্রস্তুত।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে রাশিয়া-বাংলাদেশ আন্তঃসরকারি কমিশন অন ট্রেড, ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের পঞ্চম বৈঠকে আলোচনার পরিকল্পনা করা হয়েছে, আমরা ২০২৪ সালে এ বৈঠকে মুখোমুখি হওয়ার পরিকল্পনা করছি।’

সূত্র : ইউএনবি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com