শিশু–কিশোরদের মধ্যে মাথাব্যথা বেশ পরিচিত সমস্যা। অনেক কারণেই তাদের মাথাব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত ডিভাইস ব্যবহার থেকে শুরু করে দুশ্চিন্তা, অনেক কিছুই মাথাব্যথার কারণ। আবার মস্তিষ্কের জটিল ইনফেকশন বা টিউমার, এসবের উপসর্গ হিসেবেও দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা।
মাথাব্যথার কারণকে দুইভাবে ভাগ করা যেতে পারে:
১. প্রাথমিক মাথাব্যথা: মাইগ্রেন ও দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা।
২. অন্য কোনো রোগের লক্ষণ হিসেবে মাথাব্যথা: চোখ-কানের সমস্যা, সাইনোসাইটিস, আঘাত, মস্তিষ্কের প্রদাহ, টিউমার, এমনকি মানসিক কোনো সমস্যার উপসর্গ হিসেবেও মাথাব্যথা হতে পারে।
এই বয়সীদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথার প্রকৃতি বিবেচনা করে আসল কারণ বের করাটা খুব দরকার। মাইগ্রেন বা দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা, চোখের সমস্যা এবং সাইনোসাইটিসের জন্য ছোটদের বেশি ভুগতে দেখা যায়।
মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত মাথার একপাশে হয়। তীব্রতা মাঝারি থেকে খুব বেশি হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। যদিও বাচ্চারা অনেক ক্ষেত্রেই মাথার এক পাশের বদলে দুই পাশেও ব্যথা অনুভব করতে পারে। এই ধরনের ব্যথার ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস থাকতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় তীব্র আলো, শব্দ, অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকা, রাত জাগা, অতিরিক্ত চকলেট বা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার পর ব্যথা শুরু হয়। কী কারণে ব্যথা বাড়ে, নির্ণয় করতে পারলে কিছু প্রতিরোধক ওষুধের সাহায্যে মাইগ্রেনজনিত ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথার তীব্রতা মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথার চেয়ে কিছুটা কম। কিন্তু স্থায়িত্ব কখনো কখনো এক সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত পরীক্ষা বা কোনো মানসিক চাপে থাকলে এই ব্যথা দেখা দিতে পারে।
চোখ ও কানের সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে চশমা ব্যবহার করতে হবে। পরিমিত ঘুম, পর্যাপ্ত পানি পান, সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া, চকলেট বা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার পরিহার, শিশুকে চাপমুক্ত রেখে সঠিক সময়ে ঘুমের অভ্যাস করলে অনেকাংশে এই ব্যথা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধেই নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়।
তবে নিচের লক্ষণগুলো থাকলে অবশ্যই দ্রুত শিশু নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে—
১। মাথাব্যথার সঙ্গে খিঁচুনি।
২। প্রথমবারেই অতিরিক্ত তীব্র মাথাব্যথা।
৩। মাথাব্যথা কাশির সঙ্গে যদি বাড়ে, সকালের দিকে বেশি হয়, সঙ্গে বমি এবং চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
৪। যে মাথাব্যথায় বাচ্চা ঘুম থেকে জেগে যায়।
ছয় বছরের নিচের বাচ্চাদের যেকোনো মাথাব্যথাকেই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
মাথাব্যথা হলে সেটিকে উড়িয়ে না দিয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার। সাধারণ মাথাব্যথা যেমন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তেমনি জটিল কোনো রোগ হলেও দ্রুত নির্ণয় করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।