আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের খনিজ লবণ রয়েছে, শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে যা খুবই প্রয়োজন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সোডিয়াম। আমরা যে লবণ ব্যবহার করি, সোডিয়াম তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সোডিয়াম আমাদের রক্তে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকে। অনেক সময় হঠাৎ কমে যেতে পারে এই সোডিয়াম, সেটিকেই আমরা সাধারণ ভাষায় লবণ কমে যাওয়া বলে থাকি। মেডিকেলের ভাষায় একে বলে ‘হাইপোন্যাট্রেমিয়া’।
রক্তের লবণ দেহের রক্তচাপ, তরলের ভারসাম্য, স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লবণ কমে গেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে মস্তিষ্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি।
কেন লবণ কমে যায়
খুব বমি বা পাতলা পায়খানা হলে লবণ কমে যেতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ রকম সমস্যা বেশি হয়। অতিরিক্ত ঘাম হলে শরীর থেকে লবণ কমে যায়। কিছু ওষুধ সেবন করলে শরীর থেকে লবণ-পানি বের হয়ে যায়। কিডনি, হৃদ্যন্ত্র বা যকৃতের কিছু রোগে শরীর যখন ঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন করতে পারে না, তখনো লবণের ঘনত্ব কমে যেতে পারে। বিশেষ করে কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন মস্তিষ্কে আঘাত, স্ট্রোক, টিউমার ইত্যাদিতে মস্তিষ্কের লবণ–পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী একটি বিশেষ হরমোন নিঃসরণে সমস্যা দেখা দিলেও লবণ কমে যেতে পারে।
লবণ কমে গেলে কী হয়
লবণ কমে গেলে মস্তিষ্কের নিউরন বা কোষগুলোর জলীয় ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মাথাব্যথা, দুর্বলতা, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, চেতনা কমে যাওয়া, উল্টাপাল্টা আচরণ, এমনকি খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে। বেশি কমে গেলে রোগী অজ্ঞান বা কোমায় চলে যেতে পারেন।
লবণ কমে গেলে কী করা উচিত
মনে রাখতে হবে, লবণ কমে যাওয়া একটি জরুরি মেডিকেল পরিস্থিতি। লবণ কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসক রক্তের ইলেকট্রোলাইটস পরীক্ষা করে লবণ কমে যাওয়া নিশ্চিত করেন এবং কত মাত্রায় কমে গেছে, সে অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করেন। লবণের মাত্রা দ্রুত পরিবর্তন হলে রোগীর মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এ কারণে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা হাসপাতালের অধীন চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। খুব দ্রুত এটি আগের অবস্থায় আনা যাবে না, ধীরে ধীরে আনতে হবে। আবার মৃদু, মাঝারি ও তীব্র মাত্রার ক্ষেত্রে চিকিৎসাপদ্ধতি ভিন্ন।
কিছু রোগীর যদি বারবার লবণের ঘাটতি দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার পাশাপাশি কারণ বের করাটাও জরুরি। লবণঘাটতির লক্ষণ দেখা দিলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে মুখে স্যালাইন খেতে হবে, ডায়রিয়া-বমির ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা স্যালাইন খেতে বা শিরায় নিতে শঙ্কাবোধ করেন। মনে রাখতে হবে, ডায়রিয়া বা বমি হলে যেকোনো রোগীকেই স্যালাইন খেতে হবে, নয়তো লবণ কমে যেতে পারে, এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ