প্রশ্ন: আমার বয়স ৪৭ বছর। পাঁচ দিন হলো ডেঙ্গু সেরে গেছে। তবে শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। মাথা ঘোরে, এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যেতেও হাঁপাচ্ছি। কী খেলে এই দুর্বলতা কাটবে, দয়া করে জানাবেন।
বরকতউল্লাহ, চাঁদপুর
উত্তর: সাধারণত যেকোনো অসুস্থতার পর শরীরে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই সমস্যাগুলো থেকে কত দ্রুত মুক্তি পাবেন, নির্ভর করে আপনার খাওয়া, বিশ্রাম, ঘুম এবং আনুষঙ্গিক জীবনযাপনের ওপর। দ্রুত ভালো হতে প্রয়োজন শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একাধারে শরীরের তিনটি বিষয় ঠিক রাখে—১. শরীরের নিজস্ব শক্তি তৈরি করে, যা আপনাকে রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। ২. কোনো অসুখ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার থেকে সুস্থ হতে সাহায্য করে। ৩. অসুস্থতা–পরবর্তী শারীরিক ক্ষয় পূরণ করে প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এক দিনে বা হঠাৎ তৈরি করা সম্ভব নয়। এটা প্রতিদিনের সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। তাই স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত শর্করা, প্রোটিন ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। শর্করা খেলে শরীরে কাজ করার জন্য যে শক্তি দরকার হয়, সেটা পাওয়া যায়। শরীরে শর্করা এনে দেবে চাল-আটার খাবার, বার্লি, ওটস ইত্যাদি। এরপর আছে প্রোটিন। প্রোটিন পেতে খেতে হবে মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ। এ ছাড়া বিচিজাতীয় খাবার খেতে হবে, যা ভালোভাবে অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কাজ করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হলো কিছু ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের (দেহের কোষ, প্রোটিন ও ডিএনএকে ড্যামেজ করে) বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটা শরীরে রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে। সেগুলো হলো ভিটামিন এ, সি, ই, বেটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়াম ইত্যাদি। তাই ভালো থাকতে যেসব পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খেতে হবে, তার মধ্যে আছে লেবু, করলা, রঙিন পাতাকপি, বিট, ব্রকলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, পালং ও অন্যান্য সবুজ শাক, কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই, আনারস, আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ, সিমের বিচি, মটরশুঁটি, বাদাম, টক দই, গ্রিন টি ইত্যাদি। এ ছাড়া ভিটামিন বি ৬, জিংক–জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
একই সঙ্গে শরীর ফিট রাখতে কিছু খাবার আপনাকে বাদ দিতে হবে। এর মধ্যে আছে কার্বোনেটেড ড্রিংকস (কোমল পানীয়), বিড়ি, সিগারেট, টোব্যাকো (জর্দা, তামাক, সাদাপাতা, খয়ের)। এসব মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতায় বাধা দিয়ে ফুসফুস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
বরকতউল্লাহ, খাবারের পাশাপাশি আপনার এখন প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম। ঠিকমতো ঘুমে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। অপর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম শরীরে কর্টিসল হরমোনের চাপ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে (৬-৮ ঘণ্টা) ঘুমাতে হবে।