রাজনৈতিক অপরাধ ও বিত্তবৈভব প্রদর্শনীর কলুষতা থেকে সমাজ রক্ষায় কাজ করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্র্যাব) ৪০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার প্রবণতা। যত দিন যাচ্ছে, তত এই প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এর পেছনে “ডেমোনেস্ট্রেশন অব ওয়েলথ” বা বিত্তবৈভব প্রদর্শনীর মতো মনস্তাত্ত্বিক বিষয় যেমন আমার এত সুন্দর বাড়ি, এত সুন্দর গাড়ি—সেটিকে “ডেমোনেস্ট্রেট” করা, এটি সমাজকে কলুষিত করছে, অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করছে। সেই প্রতিযোগিতায় নানাভাবে অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে মানুষ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, অন্যায্যভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে, মুনাফা লুটছে, যা পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রকে কলুষিত করছে, রাষ্ট্রের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি যেন না হয়, সে জন্য এর বিরুদ্ধে আপনারা সাংবাদিকেরা লিখবেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সম্প্রতি রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানো, মানুষের সহায়-সম্পত্তিতে আগুন দেওয়া পৃথিবীর কোথাও ঘটেছে কি না, আমি জানি না। কোনো জায়গায় কমিটি নিয়ে বিরোধ হলে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া কি সমীচীন! কমিটি পছন্দ হলো না, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা লাগিয়ে দিল, এটি কি সমীচীন! এগুলো কোনোভাবেই সমীচীন নয়।’ তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন নরসিংদীতে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা মামলায় হাজিরা দিতে গেছেন, তাঁর দলের নেতারাই তাঁর ওপর হামলা পরিচালনা করছেন, তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। রাজনীতির নামে এভাবে মানুষ পোড়ানো, সম্পত্তিতে আগুন দেওয়া কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য অপরের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করা, এগুলো রাজনৈতিক অপরাধ।’ এসব অপরাধের বিরুদ্ধেও লেখা প্রয়োজন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম না, তখনো আপনাদের পাশে ছিলাম, যখন মন্ত্রী থাকব না, তখনো আপনাদের পাশে থাকব এবং আমি কখনো কোনো সাংবাদিক বা কোনো সাংবাদিক সংগঠনকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখি না।’
অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকতার প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের নানা অনুসন্ধানী রিপোর্টের কারণে, অনেক অপরাধ যেমন মাদক বিস্তার, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাষ্ট্রের সুবিধা হয়। আপনারা রিপোর্ট করলে সেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের পক্ষে সুবিধা হয়। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ৪০ বছর ধরে ঐক্যবদ্ধ আছে, এটিই বড় আশার বিষয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি যেমন বিভক্ত হয়নি, আমি আশা করব, আপনারাও ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। রাজনীতি মতাদর্শ থাকবে, পছন্দ-অপছন্দ থাকবে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হওয়া মোটেই সমীচীন নয়।’
ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমালের সভাপতিত্বে সহসভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল, মিজান মালিক ও আবুল হোসেন, ডিআরইউয়ের সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।