সোমবার, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

চকলেট দেখিয়ে অপহরণ করে হিন্দু দম্পতির কাছে লাখ টাকায় বিক্রি করা শিশু উদ্ধার : অপহরণকারী পিযুষ গ্রেফতার

staff reporter
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩
  • ৭২ বার পঠিত

চকলেট দেখিয়ে অপহরণ করে লাখ টাকায় বিক্রি করা সেই তিন বছরের শিশুকে উদ্ধার এবং ক্রেতা সহ অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা পীযুষ দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-২।
সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মোঃ ফজলুল হক এ তথ্য জানান গণমাধ্যমকে ।
ফজলুল হক জানান , ২৬ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ বেলা আনুমানিক ১২.৩০ ঘটিকায় ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন মনির মিয়ার বাজার সংলগ্ন ঢাকা উদ্যান, ব্লক-সি, রোড নং-১, বাসা নং-১২ এর সামনে রাস্তার উপর মোঃ দেলোয়ার হোসেন এর বড় মেয়ে হুমায়রা (৮) ও তার ছোট ছেলে মোঃ সিদ্দিক (০৩) সহ আরো ৭/৮ জন শিশু কিশোর খেলা করা অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি খেলারতসকল শিশু কিশোরকে চকলেট খাওয়ায়। এক পর্যায়ে অজ্ঞাত ঐ ব্যক্তি মোঃ দেলোয়ার হোসেন এর বড় মেয়েকে বলে তুমি বাসায় চলে যাও আমি তোমার ভাইয়াকে বাজার থেকে আম কিনে দিব। বড় মেয়ে যেতে না চাইলে তাকে ধমক দিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বলে আর ছোট ছেলে অপহৃত নাবালক শিশু ভিকটিম মোঃ সিদ্দিক (০৩) কে বাজার থেকে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তার বড় মেয়ে হুমায়রা ভয়ে কান্নাকাটি করতে করতে বাসায় চলে যায়। ভিকটিমের মা কাজ শেষে বাসায় আসলে তার বড় মেয়ে হুমায়রা বর্ণিত বিষয়টি তার মাকে জানায়।

তৎক্ষনাৎ ভিকটিমের মা তার স্বামীকে জানায় এবং আশপাশে খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজা খুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার জিডি নং-১৯৪১, তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২৩। পরবর্তীতে অপহৃত শিশুটির পিতা মোঃ দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং- ১১৯ তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০২৩।সাধারণ ডায়েরী হওয়ার পর থেকে সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ পূর্বক ভিকটিম উদ্ধারে তৎপর হয়। উক্ত ঘটনায় দেশব্যাপী বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ভিকটিম উদ্ধারে বিলম্ব হওয়ায় ভিকটিম এর বাবা নিরুপায় হয়ে এই বিষয়ে র‌্যাব-২ এর একটি অভিযোগ দাখিল করেন। ভিকটিমের বাবার নিকট হতে এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া মাত্রই র‌্যাব-২ উক্ত ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে অপহৃত শিশু উদ্ধার ও অপহরণকারীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে।

এ প্রেক্ষিতে র‌্যাব-২ উক্ত ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ পূর্বক পর্যালোচনা করত বিভিন্ন সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে যে অপহরণকারী ব্যক্তি পিযূষ কান্তি পাল (২৯) ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল (২৫)। গোপন তথ্যের মাধ্যমে জানা যায় যে, পিযূষ দম্পতি ভিকটিমকে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সুজন সুতার (৩২) নামক ব্যক্তির মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ^াস (৫২) ও তার স্ত্রী বেবী সরকার (৪৬) দম্পতির নিকট ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকার বিনিময়ে বিক্রয় করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮/০৫/২০২৩ তারিখ র‌্যাব-২ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উক্ত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সুজন সুতার(৩২) ’কে ডিএমপি ঢাকার শাহবাগ থানা এলাকা থেকে আটক করে। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য মতে অপহৃত শিশুকেগোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানাধীন তাড়াসি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে সুজন সুতার নিকটাতœীয়পল্লব কান্তি বিশ^াস (৫২) ও তার স্ত্রী বেবী সরকার (৪৬) দম্পতিরবাড়ী ও তাদের হেফাজত হতে অপহৃত শিশু মোঃ সিদ্দিক (০৩)’কে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ঢাকার সাভার এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রটির মূল হোতা পীযূষ কান্তি পাল (২৯), পিতা-শ্রী রমেন্দ্র চন্দ্র পাল, থানা-পঞ্চগড় সদর, জেলা-পঞ্চগড় ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল (২৫), স্বামী-পীযূষ কান্তি পাল, থানা-পঞ্চগড় সদর, জেলা-পঞ্চগড়’ দ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়।

 

গ্রেফতারকৃত আসামী পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,পীযূষ কান্তি পাল একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এমবিএ পড়াকালীন সময় পার্ট টাইম জব হিসেবে বিউটি পার্লার/স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সাথে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তারা ২০২০ সালে বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে সে মানব পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং মে ২০২২ তারিখ সালে মানব পাচারের অভিযোগে ডিএমপির বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। উক্ত মামলায় কিছু দিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনে বের হয়।পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালদ্বয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘‘সনাতনী উদ্যোক্তা ফোরাম (ঝটঋ)’’ নামক একটিগ্রুপের মাধ্যমেসন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল।

আসামী সুজন সুতারের সাথে উক্ত গ্রুপের মাধ্যমে আসামী রিদ্ধিতা পালের পরিচয় হয়। আসামী সুজন উক্ত গ্রুপে বাচ্চা দত্তক নেওয়ার জন্য একটি পোস্ট দিলেআসামী রিদ্ধিতাপাল তার বাসার স্বামী পরিত্যক্ত কাজের মহিলার একটি বাচ্চাকে ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ)টাকার বিনিময়ে দত্তক দিবে বলে সুজন সুতার সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ২১ এপ্রিল ২০২৩ ইং তারিখ যোগাযোগ করে এবং নিজের ছেলে প্রনিল পাল (১) এর ছবি সুজন সুতার কাছে পাঠিয়ে বলে ‘‘এই ছেলেকে দত্তক দেওয়া হবে, আপনাদের পছন্দ হয় কি না বলেন’’। উক্ত ছবি দেখে সুজন সুতারশিশুটিকে পছন্দ করে এবং তাকে টাকার বিনিময়ে দত্তক নিবে বলে জানায়। আসামী পীযূষ পাল ও রিদ্ধিতা পাল বাচ্চা বিক্রয় এর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন এলাকা হতেশিশু অপহরণ করে থাকে।

পরবর্তীতেগত ২৬ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ আসামী পীযূষ কান্তি পাল সাভার এলাকা হতে আনুমানিক ১২.০০ ঘটিকায়ঢাকা উদ্যান এলাকায় আসে। আনুমানিক ১২.৩০ ঘটিকার সময় আসামী বর্ণিত ঘটনার স্থান হতেভিকটিম মোঃ সিদ্দিককে রাস্তা হতে চকলেট এর লোভ দেখিয়ে কোলে করেসিএনজিযোগে গাবতলী হয়ে সাভার তার বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামীরিদ্ধিতা পাল আসামী সুজনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে একই তারিখ ১৬.০০ ঘটিকায় আগারগাঁও আইডিবি ভবন এর সামনে একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে আসামী রিদ্ধিতা পাল নিজেকে অর্পনা দাস ও আসামী পীযূষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দিয়ে তার বাসার কাজের মহিলার নাম রিদ্ধিতা পাল, পিতা-বিজয় কুমার পাল, মাতা-রমা প্রিয়াদাস, সাং-বালুরচর চৌমুহনী মোড়, থানা-বড় লেখা, জেলা-মৌলভীবাজার ভিকটিম মোঃ সিদ্দিক (০৩) কে আসামী পীযূষ কান্তি পাল ও রিদ্ধিতা পাল এর ছেলে প্রনিল পালের নামে স্ট্যাম্পকরে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকার বিনিময়ে সুজনের কাছে বিক্রয় করে। প্রমাণ স¦রুপ প্রনিল পালের টিকা কার্ড,রিদ্ধিতা পালের জন্ম সনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃত আসামী সুজন সুতার’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তার নিকটাতœীয় পল্লব কান্তি বিশ^াস ও স্ত্রীর বড় বোন বেবি সরকার এর একটি সন্তান প্রয়োজন হওয়ায় আসামী সুজন সুতারআসামী পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল এর নিকট হতে ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ) টাকার বিনিময়ে ভিকটিম মোঃ সিদ্দিককে ক্রয় করে তার নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও বেবি সরকারকে গত ২৬ এপ্রিল ২০২৩তারিখ রাত্রি বেলা গোপালগঞ্জ দিয়ে আসে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com