শনিবার, ০২:১৪ অপরাহ্ন, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

হোটেল রেস্তোরাঁ বাসায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
  • ৯ বার পঠিত

রাজধানীর সেগুনবাগিচার তোপখানা রোডে বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ (বাশিকপ) ভবনে ৫০৬ নম্বর কক্ষটির আয়তন ৫০০ বর্গফুটের কম। এই কক্ষের এক অংশে একটি টেবিলে চলে ‘সংবিধানবিষয়ক জনস্বার্থ পার্টি-সংগঠন (সিএপিপি)’-এর কার্যক্রম। সেখানে আছে একটি চেয়ার ও সেলফ। এটি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

গত বুধবার দুপুরে সিএপিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশের সময় সামনে কোনো সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। তবে দরজায় ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দুর্নীতিবিরোধী সোসাইটি’ ও একটি সিকিউরিটি কোম্পানির স্টিকার দেখা যায়। জানা গেছে, ছোট্ট কক্ষটিতে সিএপিপি ছাড়াও দুর্নীতিবিরোধী সোসাইটির কার্যক্রমও চলে। দলটির আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম তালুকদার আবার এই সংগঠনের ম্যানেজিং কমিটির মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান।

শহীদুল ইসলাম তালুকদার জানালেন, দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষটিকে চুক্তিতে ভাড়ায় নিয়ে সিএপিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। রফিকুল ও দলের সদস্য সচিব মাহাবুব আলমসহ কমিটির প্রায় সবাই এই দুর্নীতিবিরোধী সোসাইটিতেও সম্পৃক্ত।

এই সিএপিপিসহ ১৪৭টি রাজনৈতিক দল এবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত রোববার ছিল ইসিতে আবেদনের শেষ দিন। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার আশায় বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে প্রণীত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নিয়ম চালু হলে সেবারও এমন পরিস্থিতি ছিল। তখন অষ্টম জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ১৯০টি দল নিবন্ধনের আবেদন করে। এবার ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়া দলগুলোর সিংহভাগই সাইনবোর্ডসর্বস্ব। কোনো কোনোটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নেতাদের বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ট্রাভেল এজেন্সি কিংবা ভাড়া করা ছোট্ট কক্ষ। কোনোটি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধনের আবেদন করেছে।

ইসির নিবন্ধন পাওয়ার শর্ত হলো, দলের সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটি থাকতে হবে। এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলা ও ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকায় অফিস থাকতে হবে। প্রতিটিতে ২০০ জন ভোটার থাকার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু আবেদনকারী দলগুলোর অনেকগুলোরই পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি নেই। স্বামী-স্ত্রী কিংবা পিতা-পুত্রের নেতৃত্বাধীন দলের খোঁজও মিলেছে। জেলা-উপজেলায় অফিস বা কমিটি নেই– এমন দলের সংখ্যাই হবে শতাধিক।

সিএপিপির আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম সমকালকে জানান, তিনি এসএসসি পাস করেছেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় এসে কিছুদিন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে মাস্টাররোলে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে মানবাধিকার রক্ষা ও দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত। সংবিধান সংরক্ষণ করে জনস্বার্থ ও জনকল্যাণে কাজ করার আশায় রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। গত ৩ মার্চ প্রতিষ্ঠিত দলটির ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি আছে। কোনো জেলা বা উপজেলা কমিটি বা অফিস নেই। ইসির নিবন্ধন না পেলে সংগঠন হিসেবে কাজ অব্যাহত রাখবেন।

হোটেল-রেস্তোরাঁ, ট্রাভেল এজেন্সিতে দলীয় কার্যালয়
‘রাজনৈতিকপাড়া’ হিসেবে খ্যাত রাজধানীর পল্টন-সেগুনবাগিচা ও সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্তত ৩০টি নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ-তিসারী-ইনসাফ দল’-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা পুরানা পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টসের গলির বি. কে টাওয়ার। এই ঠিকানায় গিয়ে জানা গেল, ৫৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিন তলা ভবনটির নিচতলার ‘মুসলিম হোটেল অ্যান্ড কাবাব ঘর’ই হচ্ছে কথিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়। যেখানে দলের কোনো সাইনবোর্ড কিংবা আসবাব নেই। দলটির চেয়ারম্যান মিনহাজ প্রধান মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, মুসলিম হোটেলে প্রায়ই বসেন তিনি। এই সূত্রে ইসির নিবন্ধনের আবেদনে হোটেলটিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

একটু এগিয়ে ৩৪, পুরানা পল্টনের নূরজাহান শরীফ প্লাজার অষ্টম তলায় পাওয়া গেল ‘বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ’-এর প্রধান কার্যালয়। কয়েকশ বর্গফুটের একটি কক্ষের সামনে দলের নাম লেখা সাইনবোর্ড ও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ঈদ শুভেচ্ছা সংবলিত ব্যানার দেখা গেল। দলের সভাপতি আতিকুর রহমান রাজা জানালেন, ২০১১ সালের ২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠার পর থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন। এবারই প্রথম নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করেছেন। তাঁর দাবি, দলের ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ৩৪টি জেলা ও ১০৬টি উপজেলা কমিটি এবং ২০ হাজার ১০০ সমর্থক রয়েছে।

বাংলাদেশ আজাদী পার্টির (বিএপি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে পুরানা পল্টনের শাওন টাওয়ারের ১১ তলার এ-১ নম্বর স্যুইটকে। সেখানে গিয়ে কক্ষের দরজায় দলের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের নেমপ্লেট ছাড়া অন্য কোনো সাইনবোর্ড চোখে পড়েনি। নিজেকে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি তাদের অস্থায়ী কার্যালয়। প্রয়োজনে পরে বড় অফিস নেওয়া হবে।

দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন নামের আরেকটি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডের প্রীতম জামান টাওয়ারের ষোলো তলা। সেখানে গিয়ে ‘জনতার অধিকার পার্টি’ নামের আরেকটি দলের কার্যালয়ের খোঁজ মেলে। অর্থাৎ এক কক্ষে দুই দলের অফিস।

দল চালাচ্ছেন পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী
বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস) নামের দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. হাসান চৌধুরী। ইসিতে নিবন্ধনের জন্য করা আবেদনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ১৩১/১/এ, ধানমন্ডির ক্রিসেন্ট রোডের তৃতীয় তলায় অবস্থিত তাঁর ছেলে রাহাত চৌধুরীর বাসার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। এই বাসার ড্রয়িং রুমকে ঘিরে চলে দলের যাবতীয় কার্যক্রম। এমনকি ছেলে রাহাত চৌধুরীকে দলের সাধারণ সম্পাদকও করেছেন হাসান চৌধুরী।

হাসান চৌধুরী সমকালকে বলেন, তাঁর দল গত ৪০ বছর ধরে দেশের বেকার সমাজের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি বিভিন্ন আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com