বৃহস্পতিবার, ০৪:৩১ অপরাহ্ন, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বিশ্ব রাজনীতির খেলাঘর বন্দর

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১ জুন, ২০২৫
  • ৩৫ বার পঠিত

বন্দর একটি দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ব রাজনীতির অংশ হয়ে ওঠে, বিশেষ করে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নিয়ে। আফ্রিকা থেকে এশিয়া, আমেরিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত আলোচিত বন্দরগুলোর দিকে তাকালে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। চাবাহার, গোয়াদর, হাম্বানটোটা, ওডেসা—এ রকম শত উদাহরণ দেওয়া যাবে, যেগুলো বিশ্ব রাজনীতির অংশ হয়েছে। এগুলো নিয়ে বিশ্ব শক্তিগুলো প্রায় বিরোধে জড়ায়, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। বন্দর নিয়ে রাজনীতি ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে লিখেছেন হুমায়ূন কবির

বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিজের শক্তিমত্তার জানান দিতে বিভিন্ন মহাদেশে বন্দরে বিনিয়োগ করে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো। এর মাধ্যমে সামরিক ও কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করে তারা। বিশেষ করে কয়েক বছরে চীন এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। এ নিয়ে যেমন উদ্বেগ আছে, তেমনি অনুন্নত দেশগুলোও মাঝেমধ্যে ফাঁদে পড়ে।

শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দরের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল। এটি চীনের অর্থায়নে নির্মিত হয়। মূলত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কলম্বো নির্মাণ করে। এটি ৯৯ বছরের লিজ নেয় চীন। মূলত এর মাধ্যমে এর পুরো কর্তৃত্ব নেয় তারা, যা নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। কয়েক বছর আগে সেখানে চীনের সামরিক জাহাজের উপস্থিতির অভিযোগ তুলেছিল দিল্লি। যদিও সেটিকে গবেষণার জাহাজ বলে দাবি করেছিল বেইজিং। মূলত ওই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত মহাসাগরে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চায় চীন, যা নিয়ে কলম্বোর সরকারও পরে ভুল স্বীকার করেছে।

দেখা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃত্বকে আর ১০টি সাধারণ বিনিয়োগের মতো দেখা হয় না। বিদেশি কোম্পানির মালিকানা নানা কারণে পরিবর্তন হতে পারে। মালিকানা পরিবর্তন হলে বন্দর পরিচালনার কর্তৃত্ব কার হাতে গিয়ে পড়ে, তা নিয়েও ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যেভাবে মালিকানা পরিবর্তন প্রভাবিত করতে পারে, অন্য দেশের পক্ষে তা সম্ভব না-ও হতে পারে। বন্দর পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও বিবেচনার প্রয়োজন।

এ কারণে ২০১৮ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কসকো শিপিং যখন হংকংভিত্তিক ওরিয়েন্ট ওভারসিজ লিমিটেড অধিগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের শর্তের কারণে ওরিয়েন্ট ওভারসিজ তাদের মালিকানাধীন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচ কনটেইনার টার্মিনাল তৃতীয় পক্ষের কাছে করতে বাধ্য হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ কনটেইনার টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ যেন চীনের হাতে না যায়, সেজন্যই এই শর্ত।

মূলত বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ বা আঞ্চলিক শক্তি হওয়ার বাসনায় বিদেশি বন্দরে বিনিয়োগ ও কর্তৃত্ব নিতে চায় পরাশক্তিগুলো। গত বছরের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগমনে ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্ক কোনদিকে মোড় নেবে, গোটা বিশ্ব যখন তা দেখার অপেক্ষায়, ঠিক তখনই লাতিন আমেরিকায় পাকাপোক্ত অবস্থান তৈরি করার চূড়ান্ত পদক্ষেপটি নিয়ে ফেলে চীন। চাঙ্কাই বন্দর উদ্বোধন করে চীন।

বিবিসি জানায়, এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন ফোরামের (এপেক) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে পেরু সফরে গিয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কিন্তু সবার নজর ছিল চাঙ্কাইয়ের দিকে। কারণ, অঞ্চলটিতে ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের মধ্যে এখন চীনের আধিপত্য বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওয়াশিংটন বছরের পর বছর ধরে প্রতিবেশী দেশগুলো এবং তাদের প্রয়োজনের বিষয়টিতে যে উদাসীনতা দেখিয়েছে, এখন তারা এর মূল্য দিচ্ছে। তবে তাদের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্রবন্দরের পরিবর্তে বিমানঘাঁটিতে আগ্রহ বেশি।

ভারতও আঞ্চলিক প্রভাব ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াতে বন্দরে আগ্রহ দেখায়। তারা দীর্ঘদিন ধরে ইরানের চাবাহার বন্দরের একটি টার্মিনাল উন্নয়নে কাজ করে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পেয়েছে। যার ফলে তাদের পণ্য ইউরোপ ও এশিয়ায় সহজ প্রবেশযোগ্যতা অর্জন করেছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সিত্তওয়ে নদীবন্দর নিয়ন্ত্রণের চুক্তি করেছে ভারত।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com