সম্প্রতি টাকার অভাবে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে মিয়ানমারে যেতে পারেনি সাফজয়ী বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। এসময় সাবিনা খাতুনদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ না করার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুখ খুলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কথার প্রসঙ্গে অনেকটা আকস্মিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনকে ইঙ্গিত করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন সালাউদ্দিন। এরপর বিসিবি প্রধানও চুপ থাকেননি। সালাউদ্দিনকেও পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন পাপন। যা নিয়ে বর্তমানে উত্তাল দেশের ক্রীড়াঙ্গন।
চটেছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট –
মিয়ানমারে চলমান অলিম্পিক বাছাই পর্বের ফুটবলে বাংলাদেশের নারী দল অংশ নিতে যায়নি কেন? এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গত ৩ এপ্রিলের বাফুফের সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এসময় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনকে ইঙ্গিতে ব্যঙ্গ করেন কাজী সালাউদ্দিন।
সেখানে বাফুফে সভাপতি জানান, ২০ লাখ টাকা সংকট থাকার কারণে নারী ফুটবল দলকে অলিম্পিকে পাঠানো যায়নি। এসময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা নিয়ে নারী ফুটবল দলকে মিয়ানমারে পাঠানো যেতো কিনা? এসময় সালাউদ্দিন বলেন, লোক দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেয়া আমার চরিত্র নয়।
তার সেই কথা যে ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসানের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল তা বুঝতে কারো বাকি ছিল না। বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন প্রায়শই বলে থাকেন, বাংলাদেশের ম্যাচের পর ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ক্রিকেটের ভালো-মন্দ নিয়ে কথা হয়।
এরপর সালাউদ্দিনের এমন বক্তব্যের বিষয়ে পাপনের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখনই ফোন দেবেন আমি ধরবোই।’ গত বছর বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়ের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ৫১ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে দলটির জন্য। বিসিবি গত সপ্তাহে এই অঙ্কের চেক নারী ফুটবল দলের হাতে তুলে দেয়।
নাজমুল হাসান পাপন এ নিয়ে বলেন, ‘চেক অনেক আগেই রেডি ছিল, এটা নিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কেউই যোগাযোগ করেননি।’ তিনি আরও বলেন, এই অল্প টাকার জন্য মেয়েরা একটা টুর্নামেন্টে যেতে পারেনি, এটা শুনে তিনি কষ্ট পেয়েছেন।
চটেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-
ফুটবল ও ক্রিকেট বোর্ডের দুই কর্তাব্যক্তির বাদানুবাদের মাঝে যুক্ত হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। মিয়ানমারের অলিম্পিক বাছাই পর্বে বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলকে কেন পাঠাতে পারেনি ফুটবল ফেডারেশন, তা জানতে চেয়েছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল গণমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন, ‘অল্প কিছু টাকার জন্য ইচ্ছে করে অলিম্পিক বাছাইয়ে দল পাঠায়নি।’ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিস্তারিত’ বলবেন বলেও জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী।
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, মিয়ানমারে নারী ফুটবল দলকে পাঠানোর খরচ বাবদ অর্থ চেয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ২৭শে মার্চ ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু ২৯ তারিখই তারা বিবৃতি দেয় যে নারী দলটিকে তারা সফরে পাঠাতে পারছে না, এতে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বলছে এটা ‘বাফুফের অজুহাত’।
এই অলিম্পিক বাছাইয়ে ভারত উত্তীর্ণ হয়েছে, বাংলাদেশেরও সুযোগ ছিল, এখন ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বলছে, ‘এটা মেয়েদের সাথে একরকম অন্যায়’।
ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মনে করছে, বাফুফে এই বিষয়টি নিয়ে অবহেলা করেছে এবং যখন আর কোনও সুযোগ নেই তখন তারা বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছে। এমন ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।
নারী ফুটবলাররাও চটেছেন –
বাংলাদেশের একজন নারী ফুটবলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাফের পর আর তাদের বেতন দেয়া হয়নি। সাফের আগে ১০ হাজার টাকার মতো দেয়া হতো বলেন তিনি। বাফুফের একজন মুখপাত্র বলেন, এই নারী ফুটবলারদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বাফুফে। তাই বেতন নিয়ে আলাদা করে ভাবা হয়নি। এই মিয়ানমার সফর যখন বাতিল হয়েছে ওই সময়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা একটা বিদ্রোহের ডাক দিয়ে ৩ দিন অনুশীলন থেকে দূরে ছিলেন।
বাফুফের কাছে নারী ফুটবলারদের পাঁচটি দাবি ছিল। যার মধ্যে বেতন ছিল প্রধান ইস্যু, এছাড়া বোনাস ও ম্যাচ ফি চেয়েছেন তারা এবং ক্যাম্পের খাবারের মান নিয়েও অভিযোগ করেন নারী ফুটবলাররা। – বিবিসি