তাড়াহুড়ো করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার-ইসি নিয়োগে আইন প্রণয়নের প্রচেষ্টা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগের নীল নকশা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুর ৩টায় রাজধানীর গুলশান চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ইতোপূর্বে বিএনপি সুনির্দিষ্টভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্টভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরছে।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি মনে করে যেহেতু এ সংসদ জনগণের ভোটে বৈধভাবে নির্বাচিত নয় সেহেতু এ সংসদের কোনো নৈতিক এখতিয়ার নেই এ ধরনের কোনো আইন প্রণয়ন করার। গোপনীয়তার সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে এ আইন প্রণয়নের প্রচেষ্টা আওয়ামী লীগের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার নীল নকশা মাত্র। তাছাড়া, বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোনো নির্বাচন কমিশনেই অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হবে না যদি না নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের এক তরফা সাজানো ভোটারবিহীন ও মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি মনে করে বর্তমান আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার এক মাত্র পথ, এর কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি ও জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে দুর্বার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এই পরিবর্তন আনতে হবে।
ফখরুল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হত্যা, খুন, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য র্যাবসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং সুদূর প্রসারী প্রভাব বাংলাদেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির সব দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
এদিকে গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল পাসে সরকারের কোনো তড়িঘড়ি নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিলের কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন আনার কথাও জানান তিনি। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে সংসদ ভবনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী জানান, এই বিল পাস করার জন্য সরকারের কোনো তাড়াহুড়ো নেই। বলেন, যখনই আইনটি ক্যাবিনেটে পাস হয়েছে তাৎক্ষণিক ল লেজিসলেটিভ বিভাগের ওয়েব সাইটে দেওয়া হয়েছে। আর এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। আমি তো বুঝলাম না এখানে গোপনীয়তা কী, আর আমরা এত বোকা না, এই আইনটা গোপন করে আমাদের কী লাভ।
বিশেষ পর্যবেক্ষণে আইনটির কিছু ধারায় পরিবর্তন আসছে বলে ইঙ্গিত দিলেও, সেই ধারা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি আনিসুল হক। বলেন, কিছু পরিবর্তন আসছে যেটা এখন বলব না। তার কারণ হচ্ছে এটা জানার সবচেয়ে আগে অধিকার আছে সংসদ সদস্যদের। যখন আমি এটা হাউসে উত্থাপন করবো তখন সেইটা কী সংশোধন হবে সেখানেই সাব্যস্ত হবে।
ওই বৈঠক শেষে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার মতে, অতীতে কমিশন গঠনের বৈধতা দিতেই এ আইনটি করা হচ্ছে। বলেন, এখানে আসলে স্বাধীনতা থাকে না সার্চ কমিটির। সেই জায়গাটিতে আমি আলোকপাত করেছি, বলেছি যে বিধি ৭ ও ৯ এর ব্যাপারে আমার আপত্তি আছে। আজকে একটা কথা এসেছে আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি দেয় না, আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি দেয়।