বুধবার, ০১:২৪ অপরাহ্ন, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

হালাল উপার্জন ও হারাম বর্জন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩
  • ৭১ বার পঠিত

হালাল শব্দটি আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ বৈধ, বিধিসম্মত, ন্যায্য, পবিত্র প্রভৃতি। এর বিপরীত হারাম। পারিভাষিক অর্থ- যা শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত বা বৈধ তাকে হালাল বলে। সুতরাং ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত পন্থায় আয়-রোজগার করাকে হালাল উপার্জন বলে।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন- ‘হে মানবমণ্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু সামগ্রী ভক্ষণ করো। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা বাকারা-১৬৮) এখান থেকে বোঝা যায়, হালাল খাদ্য ভক্ষণ, উপার্জন সবই ফরজ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ আরো বলেন- ‘অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হয় তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) অন্বেষণ করো।’ (সূরা জুমুআহ-১০) এখানে অন্বেষণ বলতে হালাল রুজি অন্বেষণের কথা বলা হয়েছে।

নিজ হাতে উপার্জিত হালাল রিজিক সর্বোত্তম রিজিক। মহানবী সা: বলেন, ‘আল্লাহর নবী দাউদ আ: নিজ হাতের উপার্জন থেকেই ভক্ষণ করতেন’। (বুখারি-১৯৬৬) নিম্নে হালাল রিজিক উপার্জনের বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করা হলো-
শ্রম বিক্রি : নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রত্যেক শ্রমজীবীই শ্রমের বিনিময়ে রিজিক উপার্জন করে, চাই সেটি সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি। একজন শ্রমিককে তার শ্রম বিনিময়ের আগে মালিকপক্ষ শ্রমের ধরন, সময় ঠিকঠাক করে তার সম্মতিতে শ্রমের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। সুতরাং কেউ যদি স্বেচ্ছায় তার শ্রমের ৪০-৫০ শতাংশ শ্রম বিনিয়োগ করে শতভাগ পারিশ্রমিক নেয় তাহলে এখানে তার কতটুকু আয় অবৈধ তা সহজে হিসাবযোগ্য। এভাবে সব পেশার নিম্ন শ্রেণী থেকে শুরু করে উচ্চ শ্রেণী পর্যন্ত স্বেচ্ছায় যে যতটুকু শ্রম বা কাজে ফাঁকি দেবে তার আয় ততটুকু হারাম বা অবৈধ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো- একান্ত ওজর ছাড়া প্রত্যেক মজুর শতভাগ শ্রম দিয়ে তার আয়কে বৈধ করবে। আর এটিই হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ।

মহানবী সা: বলেন, ‘হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা ফরজের পর আরেকটি ফরজ’। (বাইহাকি-১১৪৭৫) তিনি আরো বলেন, ‘হে লোক সকল! আল্লাহ তায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম-২৩৯৩) নিম্নে শ্রম বিক্রির কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হলো-

শিক্ষকতা : শিক্ষকতার পেশা একটি মহান পেশা। বর্তমান এই পেশার অবস্থা নিয়ে একটু আলোকপাত করা হলো-

১. স্কুল, কলেজ, মাদরাসা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব শিক্ষকের সপ্তাহে, মাসে কয়টি ক্লাস- তা নির্ধারিত। অনেকে এই ক্লাসগুলোর ৫০ শতাংশের বেশি ক্লাস নেন না। কেউ কেউ এমন আছেন যারা সপ্তাহে, মাসে দু-একটি ক্লাস নেন। বললে অত্যুক্তি হবে না, কেউ কেউ এমন আছেন যারা বিভিন্ন কাজের অজুহাত দেখিয়ে কোনো কোনো সপ্তাহে, মাসে আদৌ কোনো ক্লাস নেন না। অথচ মাসের শেষে পূর্ণ বেতন পকেটে ভরেন। তাদের এই উপার্জিত টাকা কতটুকু বৈধ? একটু ভাবুন তো! আবার এমন অনেকে আছেন যারা প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ে প্রচুর সময়-শ্রম দেন। ক্লাসে সেভাবে দেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাকরি যেন তাদের পরিচয়ের সাইনবোর্ড। ফলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের হক থেকে বঞ্চিত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ, গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা। কারণ তারা তো আর সেভাবে টাকা-পয়সা খরচ করে তাদের কাছে পড়তে পারে না।

অথচ সরকার এদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন দেশের সব ধনী-গরিব, শ্রমিক, দিনমজুর, অসহায়, অবহেলিত, বঞ্চিতসহ সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের সন্তানদের জ্ঞানের আলো দান করার জন্য। যে জনগণের পয়সায় সরকার তাদের বেতন দেয় তারা সেই জনগণের হক বঞ্চিত করে পকেট ভর্তি করেন। তারা কি ভাবে না, আখিরাতে এর পরিণাম কত ভয়াবহ? অবশ্য অনেকে এর থেকে ভিন্ন। তারা ক্লাসে একটুও ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেন না। নির্দ্বিধায় বলা যায়, আজ তাদের কারণেই শিক্ষার মান অনেকটাই বেঁচে আছে।

২. বর্তমান স্কুল-কলেজের অনেক প্রদর্শক আছেন যারা শুধু প্রতিষ্ঠানে যান আর আসেন। কোনো প্রাক্টিক্যাল বা ব্যবহারিক ক্লাস নেন না। মূলত আজ অনেক স্কুল-কলেজে এসব ক্লাসের প্রচলন প্রায়ই উঠে গেছে। আফসোস তাদের জন্য, তারা কী উপার্জন করে নিজে খান আর পরিবার-পরিজনকে খাওয়ান?

৩. বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় হলে ডিউটিরত অনেক শিক্ষক প্রত্যক্ষভাবে আবার কখনো বা পরোক্ষভাবে পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করে থাকেন। ইশারা-ইঙ্গিতে হলেও পরীক্ষার্থীদের বিপদ থেকে সতর্ক করে দেন। পরীক্ষা শেষে পকেট ভরে ডিউটির সম্মানী নেন। এটি কি হালাল হবে? অনেক জায়গায় পরীক্ষা কমিটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে, কখনো বা তাদের ফাঁকি দিয়ে পরীক্ষার হলে সমাধান পৌঁছে দেন। তারাও তো পরীক্ষা পরিচালনার জন্য মোটা অঙ্কের সম্মানী নেন। তাদের এ অর্জিত রিজিক কি বৈধ? ভাবুন তো! অথচ এদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ছিল পরীক্ষাকে স্বচ্ছ-সুন্দরভাবে সম্পন্নের চেষ্টা করে সম্মানী নেয়া। আর অনিচ্ছাকৃত অনেক ত্রুটির জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

৪. অনেক শিক্ষক আছেন যারা বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে মোটা অঙ্কের হাদিয়া গ্রহণ করে তুলনামূলক অনেক নিম্নমানের বই সরলমনা ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেন। অথচ তার থেকে অনেক উন্নতমানের বই বাজারে পাওয়া যায়। তাদের এ অপরাধ কি মার্জনীয়? পার্থিব একটু স্বার্থের কারণে তারা একটি জাতির মেধাকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। দুর্বল মেধাকে ধ্বংস করে দেয়। এ আয়কে আমরা কি প্রকাশ্যে বড় ধরনের ঘুষ বলতে পারি না? মহানবী সা: বলেন, ‘ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার ওপর আল্লাহর লানত।’ (ইবনে মাজাহ-২৩১৩) মহানবী সা: আরো বলেন, ‘ঘুষদাতা-ঘুষখোর উভয়ে জাহান্নামি।’ (মুসনাদ-আল বাযযার-১০৩৭)

৫. অনেকে মেডিক্যাল ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজ-কারবার করে বেড়ায়, এটিও অবৈধ ইনকাম সন্দেহ নেই।

৬. আর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিভিন্ন দিক থেকে বৈধ-অবৈধ অনেক পয়সা পকেটে ভরার সুযোগ থাকে। কেউ কেউ বাছবিচার করে, আর কেউ করে না। পকেট ভরে হারাম পয়সায়। (আগামী দিন দ্বিতীয় অংশ)

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com