প্রতি বছর কুরবানির ঈদকেন্দ্রিক পশু কেনাবেচায় বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়। এর বেশিরভাগই সম্পন্ন হয় নগদ টাকায়। তবে এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে ক্যাশলেস লেনদেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে পশু কেনাবেচায় মোবাইল অথবা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন যে কেউ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যেই ঢাকা উত্তর এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উভয়পক্ষের পরিকল্পনা ভাগাভাগির জন্য ডাকা হয়েছে যৌথসভা। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের লেনদেন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ঘটলেও স্বল্পমেয়াদি পশুর হাটের বিপুল অঙ্কর লেনদেনের অধিকাংশই নগদ অর্থে সংঘটিত হয়। ফলে একদিকে নগদ অর্থের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয় এবং ব্যাংক, এটিএম মেশিনে অর্থ জোগান দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত নোট ছাপানো ও সরবরাহের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, নগদ অর্থের এই ব্যাপক লেনদেনের ফলে বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেমন-জাল টাকার বিস্তার, চুরি-ছিনতাই ইত্যাদি নানা ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পায়। ফলে এই সময়ে পশু ক্রেতা-বিক্রেতার অর্থের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধী শনাক্ত করা এবং জাল টাকা শনাক্তে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
এসব সমস্যা সমাধানে ২০২২ সালে কুরবানির ঈদকেন্দ্রিক ঢাকার ৬টি পশুর হাটে লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পাইলট কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার লেনদেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয়। সফলভাবে এই পাইলট কার্যক্রম পরিচালনার প্রেক্ষিতে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের কুরবানির পশুর হাটেও একই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালেও কুরবানির ঈদকেন্দ্রিক কার্যক্রমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহায়তায় তৃণমূল পর্যায়ে পশু বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ডিজিটাল মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের পশু খামারিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হয়। এ লক্ষ্যে ঢাকার বাইরে ২৬টি জেলায় (রাজবাড়ি, শেরপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, বাগেরহাট, চুয়াডাংগা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল এবং সাতক্ষীরা) ১০টি ব্যাংক (এবি, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, ইস্টার্ন, আইএফআইসি, ইসলামী, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, দ্য সিটি, ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক) এবং ৩টি এমএফএস প্রোভাইডার (বিকাশ, নগদ এবং ইউপে) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উল্লেখিত জেলাগুলো থেকে পশু বিক্রেতাদের ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাটে পশুসহ আসার আগে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব (পারসোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট) খোলা, তাৎক্ষণিক ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব খোলার লক্ষ্যে সব হাটে আগত পশু বিক্রেতাদের ও তাদের নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং এক কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি সঙ্গে রাখার বিষয়ে জানানো, ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে পশু বিক্রেতাদের অর্জিত সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে জানানো হয়।
স্মার্ট কুরবানির হাট কার্যক্রমের পরিকল্পনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি হাট এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২টি হাটে বিভিন্ন পেমেন্ট স্কিম প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের (ভিসা, মাস্টার কার্ড এবং অ্যামেক্স) সার্বিক তত্ত্বাবধানে একটি করে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপিত হবে। যেখানে ব্যাংক এবং এমএফএসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ডিজিটাল লেনদেনে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবেন। এসব হাটে পশু ক্রেতা ও বিক্রেতা আর্থিক লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে (ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, এমএফএস, মোবাইল ফোনে ব্যবহার্য অ্যাপ্লিকেশন, বিশেষভাবে বাংলা কিউআর কোড) করার সুযোগ পাবেন। যা নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি, নকল ছেঁড়া/ফাটা নোটসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।