শনিবার, ০৭:০৮ অপরাহ্ন, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

শীতকালে সুস্থতায় যে খাবারগুলো বেশি খাবেন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৬১ বার পঠিত

প্রকৃতিতে চারদিকে শীতের আমেজ। শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘাস, শেষ রাতের ঠাণ্ডা বাতাস আর কুয়াশার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে সতেজ করে তুলে। শীতের সময় ফ্লু, ঠাণ্ডাজ্বর, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ শরীরকে সহজেই কাবু করে ফেলতে পারে। তাই শীতে সুস্থ থাকতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে ডায়েটে সেসব খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণকে সহজেই পরাস্ত করতে পারে। এর ফলে রোগে ভুগলেও গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। সুস্থ থাকার জন্য ডায়েটে পুষ্টিকর খাবারের বৈচিত্র্য থাকা উচিত। এখানে শীতকালে সুস্থ থাকার জন্য যেসব খাবারে গুরুত্বারোপ করা উচিত তার একটি তালিকা দেওয়া হলো।

পানি

শীতকালে জলবায়ু রুক্ষ ও শুষ্ক হওয়ায় আমাদের ত্বক ফাটতে থাকে। তাই ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পানি ডিহাইড্রেশন এবং ত্বকের শুষ্কতা থেকে আমাদের রক্ষা করে। দিনে অন্তত ৫ থেকে ৬ লিটার পানি পান করুন।

ভেষজ চা

পানীয় হিসেবে পান করুন ভেষজ চা। এমন অনেক ধরনের ভেষজ চা রয়েছে যা আমাদের সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। লেবু এবং ক্যামোমিলের মতো ভেষজ চা আমাদের স্নায়ুকে শান্ত করে এবং শরীরকে শিথিল করে। ফলে হতাশা, উদ্বেগ কমে। ভালো ঘুম হয়।

ডিম

শীতের সময়ে ডিম খেলে তা কেবল আমাদের ভেতর থেকে উষ্ণই রাখে না, সেইসঙ্গে এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকরও। ডিমের অমলেট কিংবা সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে মিলবে অনেক রকম উপকারিতা। এটি সকালের নাস্তায়ও একটি ভালো খাবার হিসেবে কাজ করে।

দুধ

ভিটামিন বি৬-এর অন্যতম ভালো উৎস হলো দুধ। তরল দুধ পান করতে পারেন অথবা প্রতিদিনের নাস্তার সঙ্গেও যোগ করতে পারেন। দুধের সঙ্গে ওটস বা কর্নফ্লেক্স মিশিয়ে খেতেও ভালো লাগবে। পুষ্টিকর এই খাবার সব বয়সীদের জন্যই উপকারী। বিশেষ করে বয়স্কদের খাবারের তালিকায় দুধ রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার খেলে যদি কোনো ধরনের সমস্যা হয়, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

সাইট্রাস ফল

কমলা ও মোসাম্বির মতো সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি-তে সমৃদ্ধ। ভিটামিন-সি শরীরের রোগদমন তন্ত্রকে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ৭৫ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি গ্রহণ করা উচিত। একটি মাঝারি আকারের কমলা থেকে প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম, একটি মোসাম্বি থেকে প্রায় ৮০ মিলিগ্রাম এবং একটি লেবু থেকে প্রায় ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে ত্বক ও রক্তনালিকে সুস্থ রাখে এবং শরীরের রোগদমন তন্ত্রকে উন্নত করে।

ফাইবার যুক্ত খাবার

বেশি পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার খান। আপেল, ওটস এবং বাদাম ফাইবার যুক্ত খাবার। এগুলো শরীরের ওজন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বয়স্কদের জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মধু-গুড়

শীতে চিনির বিকল্প হিসেবে মধু বা গুড় ব্যবহার করুন। মধুতে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ আছে। এই সময় সুস্থ থাকতে সকালে এক গ্লাস পানিতে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। গুড়ে প্রচুর পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায়। এ কারণে গুড় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

পালং শাক

পালং শীতে বাজারে পালং শাক প্রচুর পাবেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও শীতে সুস্থ থাকতে পালং শাক খেতে পারেন। পুষ্টিতে ভরপুর পালংয়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী গুণের কারণে এটি ‘সুপারফুড’ হিসেবে পরিচিত। সবুজ পাতার এ শাক দ্রুত পেটের চর্বি কমাতে পারে। পালংয়ে ভিটামিন ও মিনারেল আছে, এতে ক্যালরি থাকে কম। তাই ওজন কমাতে খাবারে বেশি করে পালং রাখতে পারেন।

স্যুপ

স্যুপ শীতে শরীর সুস্থ রাখতে স্যুপ বা ঝোল দারুণ উপকারী। শীতেই মেলে স্যুপের আসল মজা। ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম-গরম স্যুপ। শীতের বিকেলে বা রাতের খাবারে ধোঁয়া ওঠা এক বাটি স্যুপ হলে মন্দ হয় না। এতে শরীর থেকে একটু হলেও কাটবে ঠান্ডার রেশ। শরীর সুস্থ রাখতে শীতের সময় নানা সবজি আর মুরগির মাংস বা ডিম দিয়ে বানিয়ে খেতে পারেন স্যুপ।

ঘি

ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই ঘি এড়িয়ে চলেন। কিন্তু অন্যান্য স্নেহ পদার্থের তুলনায় ঘি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। ঘি’য়ে থাকা নানা পুষ্টি উপাদান অস্থিসন্ধির সক্ষমতা বজায় রাখে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বকের উন্নতিও ঘটায়।

মূলজাতীয় সবজি

শীতকালে বাজারে প্রচুর পরিমাণ মূলজাতীয় সবজি পাওয়া যায়। বিট, গাজর, শালগম ইত্যাদি শীতকালীন সবজি ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে ও খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত উপযোগী। তাই শীতকালে সুস্থতার চাবিকাঠি হতেই পারে এসব সবজি।

লাল ক্যাপসিকাম

শরীরেরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার হলো, লাল ক্যাপসিকাম। কারণ এতে ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি এর পাশাপাশি বিটা ক্যারোটিনও আছে। ভিটামিন-সি সুস্থতার পথকে সহজ করে। ভিটামিন-এ এবং বিটা ক্যারোটিনও সংক্রমণ থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে অবদান রাখে।

দই

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দইয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা হাড় ও ত্বককে সুস্থ রাখতে পারে। সুস্থ টিস্যু হলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরক্ষা। ত্বক সুস্থ থাকলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। প্রোটিন ছাড়াও অধিকাংশ দইয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। দই খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে। গবেষকদের মতে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেমের অধিক ফলপ্রসূ লড়াইয়ের জন্য অন্ত্রের সুস্থতাও গুরুত্বপূর্ণ।

আদা

আদায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা মতে, আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সাপোর্ট করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গোটা আদা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তরকারিতে বা চায়ে গোটা আদা ব্যবহার সবচেয়ে উপকারী।

রসুন

স্বাস্থ্যের উপকার বিবেচনায় শত শত বছর ধরে রসুনের ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি হৃদরোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ফ্লু ও ঠান্ডাজ্বরে উপকারী বলে ধারণা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, রসুনে বিদ্যমান অ্যালিসিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং ইমিউন সিস্টেমকে সহায়তা করে। রং চায়ে রসুনের নির্যাস মিশিয়ে পান করতে পারেন।

হলুদ

বিশেষজ্ঞদের মতে, হলুদ শরীরের রোগদমন ক্ষমতা বাড়াতে পারে। শীতকালে হলুদ চা বা হলুদ পানি পান করতে পারেন। অথবা তরকারিতে হলুদের ব্যবহার বাড়াতে পারেন।

পুদিনা

একাধিক উপকারিতা রয়েছে এই ভেষজ উদ্ভিদের। শরীর ভালো রাখতে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে মিন্ট বা পুদিনার রস খাওয়া যেতে পারে। পুদিনার পাতা ভালো করে ধুয়ে চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের স্যালাদ, জুস বা চাটনিতে ব্যবহার করা যেতে পারে পুদিনা। কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, মুখের দুর্গন্ধ, ঠান্ডা লাগা, অবসাদসহ একাধিক সমস্যায় কাজে দেয় পুদিনা।

ধনেপাতা

রান্নাঘরের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য উপাদান এই ভেষজ উদ্ভিদ। ধনেপাতার মধ্যে ভিটামিন এ, কে, সি ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও একাধিক খনিজ লবণ থাকে। তাই পার্সলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত করার পাশাপাশি একাধিক ক্রনিক ডিজিজ দূর করতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও মোক্ষম দাওয়াই এটি।

মুরগির কলিজা

মুরগির কলিজা খেতে ভালোবাসেন অনেকেই। এই খাবার শীতের সময়ে আপনার জন্য আরও বেশি উপকারী হয়ে উঠবে। ভিটামিন বি৬ ছাড়াও এতে আছে প্রচুর ফোলেট ও আয়রন। এই খাবারের আছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।

কলা

ওজন কমানোর চেষ্টা করলে প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন। ভিটামিন বি৬-এর পাশাপাশি কলায় থাকে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। তাই শীতের এই সময়ে উপকারী একটি খাবার হতে পারে কলা।

মাছ ও শিম

শীতে বেশি করে মাছ খান। আমিষের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন দুই বেলা মাছ খান। খাবারে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ রাখুন। এ ছাড়া মাছের সঙ্গে শিম যুক্ত করে খেতে পারেন। মাছের ঝোলে শিম মানিয়ে যায়। ভর্তা হিসেবেও অনন্য। শিম শুধু রসনাবিলাসই করে না, তার অন্য গুণও আছে।

মটরশুঁটি

শীতের সময়ের আরেকটি সহজলভ্য সবজি হলো মটরশুঁটি। মটরশুঁটিতেও থাকে প্রচুর ভিটামিন বি৬। এই সবজি খেলে পাওয়া যায় আরও অনেক উপকারিতা। সালাদের সঙ্গে রাখতে পারেন এটি। কিংবা আলু, গাজরের সঙ্গে ভেজেও পরিবেশন করা যায়। সেদ্ধ মটরশুঁটি আরও অনেক খাবার তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন।

বাদাম-খেজুর

শীতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এই সময় শক্তি জোগাবে এমন খাবার বেশি খেতে হয়। সুস্থ থাকতে শীতে বাদাম ও খেজুর বেশি খেতে পারেন। এসব খাবার প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরকে গরম রাখবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com