শুক্রবার, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

মৃত্যুর দশ বছর পর কতটা পূরণ হয়েছে লেখক হুমায়ুন আহমেদের শূন্যতা?

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২
  • ১৪৮ বার পঠিত

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঠিক দশ বছর আগে ২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে মারা যান বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদ।

দুই শতাধিক ফিকশন, নন-ফিকশন বইয়ের লেখক হুমায়ুন আহমেদ বাংলাদেশ তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। তার একেকটি বই প্রকাশের পরপর হাজার হাজার কপি বিক্রি হতো।

সাহিত্য বিশ্লেষকদের মতে, তার নিজস্ব একটি লেখার স্টাইল ছিল, যা অসংখ্য পাঠককে আকৃষ্ট করেছে। অনেক পাঠকের জন্য তিনি বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করেছিলেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে বড় একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

দশ বছর পর সেই শূন্যতা কতটা পূরণ হয়েছে?
হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁর ভক্তরা মিলে ‘হিমু পরিবহন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হুমায়ুন আহমেদ যেসব স্বপ্ন দেখতেন, যা করার কথা ভাবতেন, সেগুলো করা।

এই সংগঠনের একজন সদস্য আহসান হাবীব মুরাদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, তিনি হুমায়ুন আহমেদের লেখা বই পড়ে বড় হয়েছে।

”হুমায়ুন আহমেদের জায়গায় হুমায়ুন আহমেদ। (পরবর্তীতে) হয়তো তার চেয়ে অনেক ভালো লেখক আসতে পারে। কিন্তু তার যে ধারা, যে জায়গা, সেটা থেকেই যাবে। সেটা আর পূরণ হবে না,” বলছেন তিনি।

মি. আহমেদের মৃত্যুর পর তার স্টাইলে অনেকে উপন্যাস বা গল্প লেখার চেষ্টা করেছে, যদিও সেসব বই খুব বেশি পাঠকপ্রিয়তা পায়নি।

মি. আহমেদের লেখার ভক্ত আহসান হাবীব বলছেন, কারও স্টাইল অনুসরণ করে হয়তো তার পেছন পেছন কিছুদিন যেতে পারবে, কিন্তু বেশি দূর যাওয়া সম্ভব না। এটা নকল হয়েই থাকে, তার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব না।

”আমি একটা বই হয়তো পড়ছি, হুমায়ুন আহমেদের লেখার মতো লাগছে। কিন্তু তার বই পড়ার যে আনন্দ, সেটা পাওয়া যায় না” তিনি বলছেন।

দশ বছর আগে হুমায়ুন আহমেদকে অশ্রুজলে বিদায় জানাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা

বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লেখক মহীবুল আজিজ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আমার মনে হয় না, লেখকের শূন্যতা এখতো পূরণ হয়েছে। ওনার উপন্যাসের বিষয়বস্তু ওনার মতো করে লিখেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো পাঠককে উনি টেনে নিতে পারেন।”

তিনি বলছেন, ”মধ্যবিত্ত আমাদের দেশের একটি বড় সামাজিক শ্রেণী। তিনি মধ্যবিত্তের একটা দিক না, নানান দিক নিয়ে লিখেছেন। তাদের অনেক শূন্যতা, সংকট, অবস্থা- লেখায় সমস্যাগুলো নিয়ে এসেছেন। তাই আমার মনে হয় না, তার লেখার সেই শূন্যতা পূরণ হয়েছে।”

হুমায়ুন আহমেদ বই লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন, চলচ্চিত্র বানিয়েছেন।

”তার যে বহুমুখী প্রতিভা, অনেক জিনিসকে এক করে নিয়ে আসা, সেই জায়গাটায় আমাদের এখনো শূন্যতা আছে। এটাও একসময় হয়তো ঠিক হয়ে যাবে, তবে এখনো সেটা আছে,” তিনি বলছেন।

অন্যদের বই হুমায়ুন আহমেদের মতো বিক্রি হয় না কেন?
বাংলাদেশে এখনো প্রতিবছর কয়েক হাজার গল্প, উপন্যাসের বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রকাশকরা বলছেন, মি. আহমেদের বই যেভাবে বিক্রি হতো, এই লেখকদের জনপ্রিয়তা থাকলেও সেভাবে বই বিক্রি হয় না।

আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি বলছেন, ”এক কথায় যদি বলতে হয়, তাহলে বলি, তার জায়গায় এখনো কেউ আসতে পারেনি। তার লেখার যে জাদুকরী, মানুষকে আকর্ষণ করা, হুমায়ুন আহমেদ সেটা করতে পেরেছিলেন। অন্য লেখকরা হয়তো সেভাবে পারেননি। স্বাভাবিকভাবে এই কারণে ওই জায়গাটা আর কেউ পূরণ করতে পারেননি।’

আমেরিকায় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সাথে ।

তিনি জানান, হুমায়ুন আহমেদের একেকটা বই প্রথম প্রকাশে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কপি ছাপানো হতো। তাঁর বই কিনতে লম্বা লাইন তৈরি হতো।

কিন্তু এখন যেসব বই ছাপানো হয়, সাধারণত প্রথম প্রকাশে ৪০০ বা ৫০০ কপি ছাপানো হয়ে থাকে।

প্রকাশকরা বলছেন, প্রতিটি বই মেলায় নতুন প্রকাশিত কোন বইয়ের তুলনায় ১০ বছর পরেও হুমায়ুন আহমেদের পুরনো কোন বই এখনো তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়।

লেখক মহীবুল আজিজ বলছেন, ”উপন্যাস, নাটক, সিনেমা- নানা ধরনের মাধ্যমে কাজ করার মাধ্যমে তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পেরেছেন। তাকে নিয়ে মানুষের স্বাভাবিক একটা আগ্রহ তৈরি হতো। লেখক হিসাবে আগেই তো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর বাইরে চলচ্চিত্র, গীতিকার সব মাধ্যমে সফল হয়েছেন। তার প্রতি পাঠকদের এতো আগ্রহ তৈরির পেছনে এটারও ভূমিকা ছিল। এতো বহুমুখী প্রতিভা কিন্তু অন্য অনেকের মধ্যে দেখা যায় না।”

পাঠক হিসাবে হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে অন্য লেখকদের লেখার পার্থক্য বর্ণনা করতে গিয়ে তার ভক্ত আহসান হাবীব মুরাদ বলছিলেন, ”তাঁর একটা বই পড়তে শুরু করলে আপনি আর বের হতে পারবেন না। আপনাকে শেষ করে বের হবে। হয়তো তার চেয়ে অনেক ভালো লেখক আছেন, কিন্তু শুরু থেকে লেখায় এই ধরে রাখার বিষয়টা থাকে না।”

তবে হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের শূন্যতা পূরণ না হলেও তার পাঠকের বই পড়ার একটা উন্নতি দেখতে পাচ্ছেন প্রকাশক ওসমান গনি।

”আগে যারা মাসুদ রানা পড়তো, রোমেনা আফাজের বই পড়তো, পরবর্তীতে যারা হুমায়ুন আহমেদের বই পড়েছে, তারা এখন সিরিয়াস ধরনের বই পড়তে শুরু করেছে। ফলে আগের চেয়ে সিরিয়াস ধারার বইয়ের কাটতি কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখানে একটা বড় সফলতা এসেছে,” বলছেন প্রকাশক ওসমান গনি।

 

সুত্রঃ বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com