ধমক আর মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ৫ বছরের শিশু তন্নীর কান্না ২৯ ঘণ্টা স্তব্ধ করে রাখে অপহরণকারীরা। মায়ের কাছে যাব, বলতেই চালানো হয় নির্যাতন আর নিপীড়ন। অপহরণের ২৯ ঘণ্টা পর মুক্তিপণ ছাড়াই অপহৃত শিশু তন্নীকে উদ্ধার করেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার পুলিশ।
অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহমুদুল হাসান। তিনি জানান, অপহরণের ঘটনায় তার বাবা নুরুল হক বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় বুধবার মামলা দায়ের করেন। পরে মোবাইল টেকনোলজির মাধ্যমে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেফতার ও অপহৃত শিশু মোছা. রোজিনা আক্তার তন্নীকে (৫) উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত শিশু তন্নী যুগান্তরকে জানায়, তাকে বলেছিল- তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাব। তোমার বাবা তোমাকে ডাকছে- এ কথা বলেই মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বাবাকে না পেয়ে কান্না শুরু করলে ধমক দেয়। আম্মার কাছে যাব বললে ওরা আমাকে বলে- তোকে মেরে ফেলব।
২৯ ঘণ্টা পর মেয়েকে কাছে পেয়ে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তন্নীর মা আকলিমা আক্তার। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে যুগান্তরকে বলেন, মেয়েকে জীবন্ত পেতে হলে ১০ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করেছিল চক্রটি। সুস্থ অবস্থায় ও মুক্তিপণ ছাড়াই সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের টিকুরী গ্রামের নুরুল হকের কন্যা রোজিনা আক্তার তন্নী। তার ফুফুর বাড়ি প্রতিবেশী গ্রাম অচিন্তপুর ইউনিয়নের ষোলপাই উত্তরপাড়া আল হেলাল জামে মসজিদের ওয়াজ মাহফিলে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাত ৭টার দিকে বেড়াতে যায়। তন্নীর ফুফাতো বোন তানজিনা আক্তারের (৭) সঙ্গে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ওয়াজ মাহফিলে ঘুরতে যায়।
সেখান থেকে বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রোজিনা আক্তার তন্নীকে মোটরসাইকেলযোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ওই রাত ৯টার দিকে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোন থেকে শিশুর বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
নুরুল হক জানান, অপহরণকারী তাকে বলেছে- ‘তোমার মেয়ে আমাদের কাছে আছে, ঘোরাঘুরি করিয়া কোনো লাভ নাই, যদি মেয়েকে ফেরত চান তাহলে আগামীকাল (বুধবার) সকাল ৯টায় ১০ লাখ টাকা রেডি করেন।’
গৌরীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান মজুমদার জানান, নেত্রকোনা সদর থানার রাজুর বাজার এলাকা হতে শিশু তন্নীকে বুধবার রাত ১টার দিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণে জড়িত থাকা মো. মোস্তাকিমকেও গ্রেফতার করা হয়।
গৌরীপুর থানার ওসি মো. মাহমুদুল হাসান জানান, গ্রেফতার আসামি মইলাকান্দা ইউনিয়নের ক্ষুদ কালিহর গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের পুত্র সিরাজুল ইসলাম বাবু (২৩), দুলাল মিয়ার পুত্র মো. মোস্তাকিম (২৬), চাঁন মিয়ার পুত্র মো. এখলাছ মিয়া (১৯), টিকুরী গ্রামের আবুল কালামের পুত্র কামরুল ইসলাম (২২), কোনাপাড়া গ্রামের আবুল হাসেমের পুত্র জসিম উদ্দিন (২১) মুক্তিপণের জন্য শিশু অপহরণের ঘটনা স্বীকার করেছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।