প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সকলকে বিদ্যুৎ ব্যবহারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা মিতব্যয়ী হতে পারলে লাভবান হবো।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এই পরামর্শ দেন। রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সরকার প্রধান বলেছেন মিতব্যয়ী হতে হবে। আসুন সবাই মিতব্যয়ী হই। তিনি গোটা আমলাতন্ত্রসহ সরকার এবং সরকারের বাইরে যারা সাধারণ নাগরিক আছেন সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।’
এম এ মান্নান বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অভিঘাত আমাদের উপর পড়েছে। জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যে পণ্য আমরা নিজেরা উৎপাদন করি না-সেটার অভিঘাত মোকাবিলার জন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মূলত এ কারণে দেশবাসীকে মিতব্যয়ী হতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশনা প্রতিনিয়তই দেন। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আগেও বলেছিলেন, গরমের সময় অফিসে কোর্ট-স্যুট না পরতে। এছাড়া সরকারি অফিসগুলোর এসি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় চালানোর জন্য বলেছিলেন। অপচয় না করতে প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই বলে আসছেন।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, কোনো সরকারি প্রকল্প লাভজনক হলে সে মুনাফা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য ধনুয়া হতে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।
শামসুল আলম বলেন, হাসপাতালের মত স্থাপনার সামনে মেট্রোরেল চলাচলের শব্দ কমাতে সাউন্ড ব্রেকার বসানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া, মেট্রোরেলের ল্যান্ডিং স্টেশনে গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতেও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, গ্রামীণ পর্যায়ে সড়ক, কালভার্ট কিংবা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে মান যেন অক্ষুন্ন থাকে সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে সজাগ থাকার নির্দেশ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রকল্প আরও নেয়া হবে বলে জানান এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ভোজ্যতেল, চালসহ আরো কিছু ভোগ্য পণ্যের দাম নিম্নমুখী। যে প্রবনতা দেখা যাচ্ছে-তাতে আগামীতে মূল্যস্ফীতি কমবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আগামী রোপা আমন চাষীরা যেন ভালভাবে আবাদ করতে পারে, সেজন্য প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক দেওয়ার বিষয়ে একনেক সভায় আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯২ দশমিক ৭৯ শতাংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ ২ লাখ ৩ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ।
সূত্র : বাসস