বরগুনার আমতলীতে নির্বাচনে ভোট না দেওয়ায় প্রকৃত ইলিশ শিকারি জেলেদের চাল না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। সোমবার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের উত্তর ঘোপখালী ও বালিয়াতলী গ্রামের প্রায় অর্ধশত জেলে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে।
জেলেদের অভিযোগ—ইউপি সদস্য মো. আব্দুল লতিফ মুন্সি স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রকৃত জেলেদের চাল না দিয়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের চাল দিয়েছেন।ইউপি সদস্য ব্যবসায়ী ও কৃষককে চাল দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি তাদের নাম দেইনি, চেয়ারম্যান দিয়েছেন।’ অভিযুক্ত মো. আব্দুল লতিফ মুন্সি আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।
জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, জাটকা ইলিশ শিকার বন্ধে সরকার মার্চ ও এপ্রিল মাসে জাটকা ইলিশ শিকারি জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রতি মাসে জেলেরা ৪০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। সোমবার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের উত্তর ঘোপখালী ও বালিয়াতলী জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়।
সেখানে ভোট না দেওয়ার কারণে ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ মুন্সি স্বজনপ্রীতি করে জাটকা শিকারি জেলে নয়, এমন জেলেকে চাল দিয়েছেন। এতে প্রকৃত জেলেরা চাল না পেয়ে ওই ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশতাধিক জেলে বাড়ি ফিরে গেছেন। জাটকা শিকারি জেলেদের চাল দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও ইউপি সদস্যদের চাল বিতরণের তালিকায় ছিল ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা।
জেলে সাইদুর রহমান, মন্নান ফকির ও জলিল বলেন, ‘একই পরিবারের একাধিক মানুষ চাল পেয়েছেন কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা ইলিশ জেলে নয়। ইব্রাহিম ও জসিম নামের দুই ভাই ফেনিতে থাকেন, তাঁরাও চাল পেয়েছেন। হাসান নামের এক লোক তিনি কৃষক, ইলিশ জেলে নয় কিন্তু তিনিও চাল পেয়েছেন।’
তাঁরা আরও বলেন, ‘ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ মুন্সিকে যারা ভোট দিয়েছেন তিনি তাদের চাল দিয়েছেন। আমরা প্রকৃত ইলিশ জেলে হওয়া সত্ত্বেও ভোট না দেওয়ার কারণে তিনি চাল দেয়নি। মোয়াজ্জেম, মোজাম্মেল, ইব্রাহিম, জসিম, হাসান, মিলন মিয়া ও রুহুল আমিন নামের যে ব্যক্তিদের চাল দেওয়া হয়েছে যারা ইলিশ জেলে নয়। তারা অনেকেই ব্যবসায়ী ও কৃষক। মোনসের মিয়া মিয়া নামের যেই ব্যক্তি রয়েছে তিনি জেলে নন কিন্তু তাঁর পরিবারে পাঁচজনকে চাল দেওয়া হয়েছে। ইউপি সদস্য তাঁর এলাকার এমন অনেককে চাল দিয়েছেন।’
এদিকে ইউপি সদস্য ভোট না দেওয়ার কারণে চাল দেননি এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে জেলে তালিকায় নাম রয়েছে ২৩৫ জনের। কিন্তু আমি নাম পেয়েছি মাত্র ১১০ জনের। তাই কিছু হের ফের হয়েছে।’ ইউপি সদস্য আরও বলেন, ‘যাদের চাল দিয়েছি তাঁরা সবাই জেলে।’ তবে তাঁরা প্রকৃত ইলিশ শিকারি জেলে কিনা এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসা. সোহেলী পারভীন মালা বলেন, ‘প্রকৃত জেলেদের মাঝে চাল দেওয়া হয়েছে। তবে তালিকা করেছে ইউপি সদস্যরা। প্রকৃত ইলিশ জেলে আছে কিনা তাঁরাই জানেন।’
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’