দেশের উত্তর-পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। প্লাবিত এলাকাগুলোয় ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। মানুষের খাদ্য, চিকিৎসার মতো ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়াও। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উঠেছে বন্যার পানি। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়েছে দুর্গত মানুষের ঠাঁই।
শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, চলতি জুনে স্কুলগুলোর মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ছিল অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেমিস্টার ও বর্ষ পর্বের পরীক্ষাও আছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বছরের এই সময়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণির পাঠদান আর লেখাপড়া শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সরব থাকার কথা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সবকিছুর ছন্দপতন ঘটেছে বন্যার কারণে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ওই সব প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সংস্কার করা হবে। যেসব জেলা থেকে বন্যার পানি নেমে যাবে সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যত দ্রুত সম্ভব চালু করা হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ক্লাস কিংবা সাপ্তাহিক সাধারণ ছুটির দিন ক্লাস এবং পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডার সমন্বয় করা হবে। কারো বই নষ্ট হলে সরকার নতুন বই দেবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ আমাদের সময়কে জানান, সিলেটসহ যেসব জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে, আমরা এসব জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। এই মুহূর্তে মানুষের লেখাপড়ার চেয়ে বেঁচে থাকা জরুরি। বন্যার প্রকোপ কমে এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে। সব জেলায় বন্যা হয়নি। কোথাও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে, আবার কোথাও বন্যার পানি নেমে যাবে। নষ্ট হওয়া আসবাবপত্র দ্রুত সংস্কার করে ক্লাস পাঠদানের উপযোগী করা হবে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে স্কুল চালু করে দেওয়া হবে, ক্লাস-পরীক্ষাও হবে। কীভাবে ক্লাস-পরীক্ষা সমন্বয় হবে, সেটি আমরা পরে নির্ধারণ করব।
বন্যাকবলিত জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে কাজ করছেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এখন পর্যন্ত কত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, এর সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার স্কুল বন্ধের তথ্য এসেছে। বাস্তবে তা ৪ হাজারের কাছাকাছি হতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ হওয়া স্কুল-কলেজের সংখ্যা এক হাজারের মতো হতে পারে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার মাদ্রাসাও বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার খবর পাওয়া গেছে। এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট অঞ্চল। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই অঞ্চল থেকে ৯৩০ স্কুলের ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা।
বন্যাকবলিত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণি কার্যক্রম স্থগিত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সোহেল আহমেদ জানান, বন্যাকবলিত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেগুলোতে পাঠদান স্থগিত রাখতে হবে। শ্রেণি পাঠদান স্থগিত থাকলেও শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন এবং বিদ্যালয়ের সম্পদরক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বন্যার বড় ধাক্কা লেগেছে শিক্ষায়। ইতোমধ্যে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ঘোষণা করা যাচ্ছে না নতুন সময়সূচি। আর এসএসসি পেছানোর কারণে পেছাতে হবে এইচএসসিও। স্থগিত করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান বিএড পরীক্ষাও।