প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেফতারের পর আদালতের আদেশে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিকেলে রাজশাহী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক মাহবুব আলম তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জালাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬-এর ২ ধারার মামলায় আসামি চাঁদকে বিকেলে আদালতে হাজির করে পুলিশ। চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি কেন দিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ও হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কি না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। এ সময় চাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। তবে শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর ভেড়িপাড়া মোড় থেকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তাকে আদালতে নেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর পুঠিয়া থানায় দায়ের করা প্রথম মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে আবু সাঈদ চাঁদের নামে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়েছিল গত ২১ মে রাতে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ সন্ত্রাস দমন আইনে পুঠিয়া থানায় মামলাটি করেছিলেন।
গত ১৯ মে এক সমাবেশে ওই হুমকি দিয়েছেন আবু সাঈদ চাঁদ। ওই ঘটনার পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর ভেড়িপাড়া মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে চাঁদকে আনা হয় এবং গ্রেফতারের তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানার ভেড়িপাড়া মোড় দিয়ে পালানোর সময় একটি প্রাইভেটকার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই হুমকির ঘটনার পর আমাদের বিশেষ টিম গত কয়েক দিন ধরে আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেফতারের জন্য এ অভিযান অব্যাহত রেখেছিল।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য ছিল তিনি নগরীতেই অবস্থান করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ভেড়িপাড়া মোড়ে তল্লাশি চালানোকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি গাড়িতে করে রাজশাহী নগরীর এক জায়গা থেকে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো: আনিসুর রহমান, রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেনসহ আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির ঘটনায় তার নামে এখন পর্যন্ত নগরীর চারটি ও জেলায় তিনটিসহ মোট সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় তাকে এখন পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার দেখানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ।
গত ১৯ মে বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে চাঁদ বলেন, ‘আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। এক দফা- শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।’
আবু সাঈদ চাঁদের এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। রোববার (২১ মে) বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় আবু সাঈদ চাঁদকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। একইসাথে আ’লীগের পক্ষ থেকে রাজশাহীতে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে তার কুশপুতুল দাহ করা হয়। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ শুরু হয়। রাজশাহী জেলা ও মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বেশকিছু মামলা হয়।