বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ঢাকা ওয়াসার প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ৪২ টাকা। সেপ্টেম্বর থেকে এ দামের সাথে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত যুক্ত হবে। তবে এতটুকু দাম বাড়িয়েই সন্তুষ্ট নয় ওয়াসা। তারা আরো দাম বাড়াতে চায়। এবার ধনী-গরিব এলাকা ভাগ করে কোথাও বেশি আবার কোথাও কম দাম নির্ধারণ করতে চায় সংস্থাটি। এলাকাভিত্তিক আলাদাভাবে দাম বাড়াতে ওয়াসার হয়ে এরই মধ্যে গবেষণা চালিয়েছে ওয়াটার এইড। এতে দেখা যায় বস্তি এলাকায় সামান্য কিছু দাম কমা ছাড়া সব এলাকাতেই দাম বাড়বে।
গতকাল সোনারগাঁও হোথটেথলে এলাকাভিথত্তিক পাথনির দাম নির্ধারণবিষয়ক টেকথনিথকথ্যাল স্টাথডির (কাথরিগথরি গবেষণা) ফলাফল প্রকাশ করা হয়। উপস্থাপন করেন ওয়াটার এইডের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার মো: তাহমিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে ওয়াসার ব্যয় হয় ২৫ থেকে ২৬ টাকা। এতে তাদের ভর্তুকি দিতে হয়। সরকার ক্রমেই ওয়াসাকে ভর্তুকি কমাতে বলেছে। এ জন্য রাজধানীকে ১০টি জোনে ভাগ করে এলাকাভিত্তিক ও গ্রাহকভিত্তিকভাবে পানির নতুন দাম নির্ধারণ করতে চায় ঢাকা ওয়াসা।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, উচ্চবিত্তের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি এক হাজার লিটার পানির জন্য দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা; অর্থাৎ প্রতি হাজার লিটারে উচ্চবিত্তদের জন্য দাম বাড়ছে ২২ টাকা ৩২ টাকা। ওয়াসার তথ্যমতে নগরে ওয়াসার উচ্চবিত্ত গ্রাহক শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ। এরপর উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ টাকা ২৫ পয়সা; যা বর্তমানের চেয়ে ১৬ টাকা ০৭ পয়সা বেশি। রাজধানীতে এ শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন এক দশমিক ৩ শতাংশ। মধ্যবিত্তদের জন্য দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা; যা আগের দামের চেয়ে ৯ টাকা ৮২ পয়সা বেশি। আর নগরে ওয়াসার মধ্যবিত্ত গ্রাহক ৪ শতাংশ। নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য দাম বাড়ছে ৩ টাকা ৫৭ পয়সা। প্রস্তাবিত দাম ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। আর রাজধানীতে ওয়াসার নিম্নমধ্যবিত্ত গ্রাহকই সর্বোচ্চ; যা শতকরা ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ। নিম্নআয়ের ২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ একই পরিমাণ পানির জন্য বিল দেবেন ১২ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে তাদের প্রতি হাজার লিটারে পানির দাম কমছে ২ টাকা ৬৮ পয়সা।
ওয়াসার সাড়ে ১১ শতাংশ বাণিজ্যিক গ্রাহক বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানির জন্য ৪২ টাকা পরিশোধ করছেন। প্রস্তাবিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী সেই বিল বাড়বে ৮ টাকা। ৪২ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৫০ টাকা। তবে উৎপাদন মূল্যের সমান, অর্থাৎ ২৫ টাকা হারে বিল পরিশোধ করবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নতুন মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে ওয়াসার পানি উৎপাদন মূল্য ও বিক্রি মূল্যের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা সমান করা যাবে; অর্থাৎ এ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম রাজধানীতে পানির মূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের জন্য ঢাকা ওয়াসাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, পানির দাম অবশ্যই যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। মানুষের জন্য যেন কষ্টকর না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার কম মূল্যে পানি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান যাতে অকার্যকর না হয় সে দিকটাও লক্ষ রাখতে হবে।
তাজুল ইসলাম আরো বলেন, ভর্তুকি দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না। পানির দাম কত হবে তা ওয়াসার বোর্ড সভার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। অযৌক্তিকভাবে পানির দাম যেমন বাড়ানো উচিত নয়, তেমনি যৌক্তিক মূল্য প্রদানে অসহযোগিতা করার সুযোগ নেই। উৎপাদন খরচ কোনোভাবেই বিক্রয়ের চেয়ে কম হতে পারে না। শুধু দাম বাড়লেই প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে না। যদি সেখানে অব্যবস্থাপনা থাকে। অব্যবস্থাপনা বা দুর্নীতির কারণে পানির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। দুর্নীতিকে কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, অভিজাত এলাকায় বসবাসরত মানুষকে যে মূল্যে পানি দেয়া হয় বস্তিবাসী বা নিম্নবিত্তদের তার থেকে কম ম্ল্যূ পানি সরবরাহ করা উচিত। গরিব মানুষের কাছ থেকে রাজস্ব নিয়ে ধনীদের কম দামে পানি দেয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য জোনভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। আর শুধু পানি নয়; গ্যাস, বিদ্যুৎ ও হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য ইউটিলিটিক্যাল সার্ভিসের মূল্য নির্ধারণ হওয়া উচিত।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা জাহান।