লেখার বিষয়ে যতটা না, পড়ার বিষয়ে আমি ভীষণ চুজি মানুষ। আমার বাসায় প্রায় হাজার তিনেক বই আছে। যেগুলোর প্রায় সত্তর শতাংশ বই-ই আমার পড়া। এবং সবগুলো বই-ই সেরা মানের।
পাঠ্যপুস্তকের বাইরে যখন বই পড়া শুরু করি তখন শুরুটাই হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’ দিয়ে। এরপর নজরুল, শরৎ, মানিক, তারাশঙ্কর, বঙ্কিম, বিমল মিত্র, সমরেশ, বুদ্ধদেব, শীর্ষেন্দু, সঙ্কর, সেলিনা হোসেন, হরিশংকর প্রমুখ। কবিতায় জীবনানন্দ, নজরুল, জসিম উদ্দিন, মহাদেব সাহা প্রমুখ।
হুমায়ুন আমাকে টানেনি কোনকালেই। তাঁর কেবল নাটকগুলো মজা লাগত দেখতে।
ফেমাস লেখক ‘সাদাত হোসাইনের’ ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ পড়ে যেমন মাথার চুল টেনে ছিঁড়েছি, তেমনি ‘আবদুল্লাহ আল ইমরানের’ ‘কালচক্র’ পড়ে তিনদিন ঘোরের ভেতর ছিলাম। চরিত্রগুলো যেনো আমাকে ঘিরে ছিলো সারাক্ষণ! একটি লেখা পড়ে আমি আমার মনে সেই লেখাটির জন্য একটি যায়গা তৈরী করি। শিখি। জীবনের সাথে তাঁর সংযোগ খোঁজার চেষ্টা করি। অযথা বাক্যের ও শব্দের বাহুল্যতা আমাকে আকর্ষণ করে না। অল্প কথায় লেখার গভীরতা আমায় টানে ভীষণ।
আর তাই আমি উপন্যাসের চেয়ে কবিতা ভালোবাসি বেশি। আরও বেশি ভালোবাসি ছোটোগল্প। আমি তেমন লেখাই পছন্দ করি যে লেখার গভীরতা অনেক। ঠিক প্রশান্ত মহাসাগরের মতো। তেমন লেখা-ই আমি পড়তে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি যে লেখা জীবনের কথা বলে, প্রকৃতির কথা বলে।
আমার লিস্টে অনেক লেখক আছেন। তার মধ্যে অনেকেরই লেখা আমি পড়ি। পড়ে গভীরতা খুঁজি, কিন্তু ব্যর্থ হই মাঝেমধ্যে। আবার মাঝেমধ্যে বেশ পুলকিত হই কারো কারো শব্দচয়ন ও বাক্যের গঠন দেখে। অপরপক্ষে অনেক ‘ফেমাস’ লেখকের (যাঁদের প্রায় ডজন খানেক বই প্রকাশিত হয়েছে, সেই অর্থে) শব্দচয়ন ও বাক্যগঠন দেখে হাসি পায়। কেন পায় তা পাঠক জানেন।
আমার একটি দোষ আছে পাঠক হিসেবে। আর তা হল, যখন যে লেখা পড়ি সেই লেখা নিজের মতো করে পড়ি। এটি মোটেই উচিত নয়। একজন লেখক তাঁর ইচ্ছেমতো তাঁর ভাবনায় লিখবেন। আমি পাঠক তাঁর লেখায় নাক গলানোর কে!কিন্তু তবুও আমি নাক গলাতে পছন্দ করি। কেন করি?
কারণ আমি একজন পাঠক। আর পাঠক হিসেবে আমার অধিকার আছে লেখকের সমালোচনা করবার।