বৃহস্পতিবার, ০৭:২৩ অপরাহ্ন, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

নবান্ন উৎসব নিয়ে এল অগ্রহায়ণ

শামীম লাবু
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৪৩ বার পঠিত

বাংলার মানুষের জীবনে অবিচ্ছেদ্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ‘অগ্রহায়ণ মাস’ ও ‘নবান্ন’। অগ্রহায়ণ শব্দের অর্থ বর্ষ শুরুর মাস। আর অগ্রহায়ণের প্রথম দিনটিই বাংলাদেশে নবান্ন যাপনের দিন হিসেবে পরিচিত। দেশের প্রাচীনতম উৎসবেগুলোর একটি নবান্ন উৎসব।

নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো গাঢ় করার উৎসব। হেমন্ত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি ছেয়ে যায় হলুদ-সবুজ রঙে। এই শোভা দেখে কৃষকের মন আনন্দে ভাসতে থাকে। কারণ, কৃষকের ঘর ভরে উঠবে গোলা ভরা ধানে। অগ্রহায়ণে অবসান হয় কৃষকের এই প্রতীক্ষার। বাড়ির আঙিনা নতুন ধানের ম-ম গন্ধে ভরে ওঠে।

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী অগ্রহায়ণ অষ্টম মাস হিসেবে বিবেচিত হলেও হেমন্ত ঋতুর দ্বিতীয় এ মাসের প্রথম দিনটিই বাংলাদেশের নবান্ন। বাংলার ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করার জন্য মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে নতুন চালের পিঠা ও পায়েস রান্না করে ধুমধামের সঙ্গে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। গ্রামের বধূরা অপেক্ষা করেন বাপের বাড়িতে নাইওরে গিয়ে নবান্ন যাপনের জন্য। পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কি আর নতুন চালের ভাতের সুগন্ধে ভরে ওঠে মন।

নবান্ন, অগ্রহায়ণ এবং হেমন্ত নিয়ে বাংলার কবি-সাহিত্যিকদেরও আগ্রহের শেষ নেই যেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে/ জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে/ শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার/ রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার/ স্বর্ণ শ্যাম ডানা মেলি।…’। ‘অঘ্রানের সওগাত’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ঋতু খাঞ্চা ভরিয়া এল কি ধরণির সওগাত?/ নবীন ধানের অঘ্রানে আজি অঘ্রান হলো মাৎ।/ “গিন্নি পাগল” চালের ফিরনী/ তশতরি ভরে নবীনা গিন্নি/ হাসিতে হাসিতে দিতেছে স্বামীরে, খুশিতে কাঁপিছে হাত/ শিরনি রাঁধেন বড় বিবি, বাড়ি গন্ধে তেলেসমাত।’

নবান্ন উৎসবের মতো গ্রামবাংলার অন‌্যান‌্য ঐতিহ‌্যও হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে এখন পারিবারিক বন্ধনটা আর আগের মতো নেই। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি আত্মিক টান কমে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সংস্কৃতিতে। পিঠা-পুলি খাওয়ার ঐতিহ‌্য হারিয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতি পাল্টে যাওয়ার কারণে এখন আর নবান্ন উৎসব আগের মতো দেখা যায় না। নবান্নের উৎসব এখন মেকি আনুষ্ঠানিতকতার মধ‌্যে সীমাবদ্ধ।

গ্রামীণ জনপদে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ আছে কিন্তু কৃষকের ঘরে নেই নবান্নের আমেজ। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। সিকি শতাব্দী পূর্বেও নবান্নের ধান কাটার উৎসবে মুখরিত হতো গ্রামের প্রতিটি আঙ্গিনা। গ্রামীণ জনজীবনে নবান্ন উৎসব এখন শুধুই স্মৃতি।

বাঙালির নবান্ন তথা উৎসবের ঋতু হেমন্ত, নবান্নের আশা জাগানিয়া, দুঃখ ভোলানিয়া হেমন্ত। স্বপ্নের জাগরণে হতাশা আর নিরাশা ভুলে চলতো নবান্নের উৎসব। পাক পালাগান, জারি গান, কবি গান আর গাজীর গীতের আসর জমানো হতো প্রকৃত গ্রামবাংলায়।

অগ্রহায়ণের প্রথম দিনের আশা হোক, ষড়ঋতুর বাংলাদেশে হেমন্ত আসুক অপার সম্ভাবনা আর সমৃদ্ধির শুভ সংবাদ নিয়ে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com