রবিবার, ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা আজ

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক ‍॥
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০২২
  • ৮২ বার পঠিত

জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন।

করোনা মহামারীর চরম অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাজারে চাল, ডাল, আটা, ডিম, তেলসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। চাপ পড়ছে মূল্যস্ফীতির ওপর। আবার ডলার সংকটে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে আছে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতিপথকে ব্যাহত করছে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই আগামী বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আজ বেলা ৩টায় মহান জাতীয় সংসদে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক শিরোনামে এবারের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাত।

এবারের বাজেট দেশের ৫১তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম বাজেট।

স্বাধীন দেশে ৭৮৬ কোটি টাকা দিয়ে শুরু হয় বাজেট। আর আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার প্রায় পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকা। যা ১৯৭২ সালের প্রথম বাজেটের চেয়ে প্রায় ৮৭০ গুণ বড়। স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ। প্রথম বাজেট ছিল অনেকটাই বিদেশি অনুদান ও ঋণ নির্ভর। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। প্রশাসনিক ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নই ছিল এ বাজটেরে প্রধান লক্ষ্য। তিন বছরের ব্যবধানে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছাড়ায় হাজার কোটিতে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর, বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের ৫০তম বাজেট। এ অর্থবছরে বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকায়।

বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো এবারের বাজেটের প্রধানতম লক্ষ্য। ইতোমধ্যে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬.২৯%, যা গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হচ্ছে আজ। যাতে ভর্তুকি খাতে ব্যাপক বরাদ্দ বাড়ছে বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, আগামী বাজেটের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির হার ৫.৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। মোট বিনিয়োগ ধরা হয়েছে জিডিপির ৩১.৫ শতাংশ, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি ৬.৬ শতাংশ এবং বেসরকারি ২৪.৯ শতাংশ।

মোট রাজস্ব আয় ধরা হচ্ছে জিডিপির ৯.৮ শতাংশ, মোট ব্যয় জিডিপির ১৫.৪ শতাংশ, মোট ঘাটতি জিডিপির ৫.৫ শতাংশ এবং প্রাথমিক ঘাটতি জিপিডির ৩.৭ শতাংশ। আর আগামী বাজেটে জিডিপির আকার হবে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বড় কারখানাগুলোতে সহায়তার ক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটে চমক থাকবে। যারা অন্যান্য দেশে পণ্য তৈরি ও বিক্রি করতে সক্ষম তাদেরকে সহায়তা করা। আমরা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যের প্রচারে অগ্রাধিকার দেব। এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশে থেকে অবৈধভাবে বিদেশে নিয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিতে পারে সরকার। যারা ট্রেড আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ নিয়ে গেছেন তারা জরিমানা হিসাবে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা ফিরিয়ে আনার সুযোগ পেতে পারেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সূত্র মতে, বাজেটে করহার বাড়ছে না। তবে আওতা বাড়াতে থাকবে বেশকিছু নির্দেশনা। এ ছাড়া রাজস্ব ও রপ্তানি বাড়াতে কিছু কিছু খাতে করছাড় দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটা চমক হলো পোশাক খাতের মতো সব রপ্তানি খাতে করপোরেট কর ১২ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে এই হার ২২.৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩০ শতাংশ।

আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ আছে, তা আগামী অর্থবছরে বহাল রাখা হচ্ছে না।

ভ্যাট বাড়ছে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিছু পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এটি বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বাজারে ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে। পাশাপাশি মোবাইল সেট বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট নেই। ব্যবসা পর্যায়ে মোবাইল সেটের ওপর বাড়িয়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে মোবাইলের দাম বাড়তে পারে।

ভ্যাট কমতে পারে
কয়েকটি খাতে ভ্যাট হার কমানো হচ্ছে। এর মধ্যে হোটেল-রেস্টুরেন্টের ভ্যাট কমানো হচ্ছে। বর্তমানে এসি রেস্টুরেন্টে খেতে ১০ শতাংশ এবং নন-এসি রেস্টুরেন্টে খেতে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে উভয় ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। অপরদিকে, জুয়েলারি শিল্পের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হচ্ছে। ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে (দাখিলপত্র) ব্যর্থতার জরিমানা ১০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আর ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা ও অনিয়মের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে।

জানা গেছে, আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com