ইডেন কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন ফাতেমা আকতার। পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে কিছু করার কথা ভাবছিলেন তিনি। চাকরি না করে নিজে কিছু করার ভাবনাটাই বেশি কাজ করছিল তাঁর মধ্যে। সেই চিন্তা থেকেই ২০১৩ সালে নিজের বাসার কাছে যাত্রাবাড়ির ধলপুর এলাকায় গড়ে তোলেন ছোটখাটো একটি খামার।
মাত্র তিনটি গরু নিয়ে শুরু করেন মেসার্স ফাতেমা দুগ্ধ বিতান। ফাতেমার সেই খামারে এখন গরুর সংখ্যা ৪০। প্রতিদিন ৪০০ লিটার দুধ বিক্রি করেন তিনি। ফাতেমার এ খামারকে ছোট থেকে বড় করতে ধাপে ধাপে ঋণসহায়তা দিয়েছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক। সেই ঋণের টাকায় বড় হয়ে ওঠা খামারটি এখন নিজের কেনা জমিতে স্থানান্তরের অপেক্ষায় আছেন ফাতেমা। তাঁর এ সাফল্যে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরার পাশাপাশি এখন ব্যবসা বড় করার ও নতুন কিছু করার স্বপ্নও মাথাচাড়া দিয়েছে।
ফাতেমা আকতার বলেন, আমি যদি কোনো চাকরি করতাম, তাহলে পরিবারকে এতটা সময় ও আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিতে পারতাম না। এখন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও বেশ স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন স্বপ্ন দেখছি মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পণ্য তৈরির কারখানা ও দোকান দেওয়ার।
ফাতেমা আকতার তিনটি গরু নিয়ে খামারটি শুরু করার পর ব্যবসা বড় করতে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে যান ঋণের জন্য। কিন্তু কিছু ব্যাংক তাঁকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়। এ সময় ব্র্যাক ব্যাংক শুরুতেই তাঁকে ছয় লাখ টাকা ঋণ দেয়। সেই ঋণের টাকায় আরও পাঁচটি গরু কেনেন। এভাবে ধীরে ধীরে বড় করতে থাকেন ফাতেমা দুগ্ধ বিতান নামের খামারটি।
বর্তমানে তাঁর ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। তাঁর খামারে কাজ করেন পাঁচ কর্মী। প্রতিদিন পাইকারি ক্রেতা ও আশপাশের মিষ্টির দোকানের লোকজন এসে খামার থেকে দুধ কিনে নিয়ে যান। আবার কোথাও কোথাও নিজেরাই পৌঁছে দেন দুধ। এভাবেই চলে ফাতেমার ব্যবসা।
ফাতেমা আকতার বলেন, ২০১৩ সালে ব্যবসা শুরু করলেও ১০ বছরে করোনার সময়টা বাদে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি তাঁকে, ‘করোনার সময় খামার চালাতে গিয়ে খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। গরুর খাবার পাওয়া যাচ্ছিল না, আবার দুধ বিক্রিও কমে যায়। তারপরও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছি নিয়মিত। এ জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে যখনই ঋণ চেয়েছি, তখনই পেয়েছি।’
ফাতেমা জানান, ব্যবসার টাকায় ধলপুরেই পৌনে চার কাঠা জমি কিনেছেন। সেই জমিতে নিজের বাড়ি ও খামার তৈরির কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হলে ভাড়ায় চালিত খামারটি নিজের জায়গায় সরিয়ে নেবেন। এরপর মিষ্টি ও দধি তৈরির একটি কারখানা ও দোকান করার পরিকল্পনা রয়েছে। ফাতেমা আকতার বলেন, ‘ঋণ দিতে ব্যাংক অনেক ধরনের কাগজপত্র চায়।
এতে অনেকেই ভয় পান। কিন্তু আমি মনে করি, কেউ টাকা দিলে তার বিপরীতে কিছু কাগজপত্র তো চাইবেই। তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বরং কাগজপত্র ঠিক থাকলে ব্যবসা করা অনেক সহজ হয়। আর ব্যাংকের ঋণ সময়মতো পরিশোধ করলে পরবর্তীকালে ঋণ পাওয়া আরও সহজ হয়।’